রাজধানীর আবদুল গণি রোডে শিক্ষা ভবনের পঞ্চম তলায় পুরো ফ্লোরে বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবায়ন ও পরিবীক্ষণ ইউনিটের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। একজন মহাপরিচালকের নেতৃত্বে সংস্থাটিতে প্রায় অর্ধশত কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন। তাদের বেতনভাতা, পরিবহন ও দাফতরিক ব্যয়, আপ্যায়ন ভাতাসহ বিভিন্ন বিষয়ে সরকারের চার থেকে পাঁচ কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে বলে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের হিসাব শাখার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। অথচ ছয়তলা এই ভবনের পাঁচটি ফ্লোরেই রয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনন্থ মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের (মাউশি) অফিস। জায়গার অভাবে দীর্ঘদিন ধরে মাউশি’র দাফতরিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ‘শিক্ষা ভবন’ নামে পরিচিত এখান থেকে বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবায়ন ইউনিট সরাতে বিভিন্ন সময় মাউশি কর্তৃপক্ষ তৎপর হলেও তা আমলে নেয়া হয়নি বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
জানা গেছে, সরকার সব শিশুকে বিদ্যালয়ে ভর্তি নিশ্চিত করতে এবং নির্দিষ্ট সময়কাল পর্যন্ত শিক্ষাগ্রহণ বাধ্যতামূলক করার লক্ষেই বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা কর্মসূচি গ্রহণ করেছিল। ১৯৯০ সালে ‘বাংলাদেশ বাধ্যতামূলক প্রাথমিক আইন’ পাস হয়। এই আইনের অধীনে প্রথম পর্যায়ে ১৯৯২ সালে প্রতি জেলার একটি করে থানায় পরীক্ষামূলকভাবে বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা চালু করা হয়। ১৯৯৩ সালে সারাদেশে তা সম্প্রসারণ করা হয়। ১৯৯৩ সালের ১ জানুয়ারি থেকে সারাদেশে আইনটি কার্যকর করা হয়। ১৯৯৫ সালে ‘বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবায়ন ও পরিবীক্ষণ ইউনিট’ প্রতিষ্ঠা করা হয়। ২০১০ সালের জাতীয় শিক্ষানীতিতে ২০১৪ সালের মধ্যে নিরক্ষরতা দূরীকরণের কথা বলা হয়।
ইতোমধ্যে সরকারের এই ইউনিটের লক্ষ্য অর্জিতও হয়েছে। তাছাড়া বাংলাদেশ এমডিজি অত্যন্ত সফলতার সঙ্গে বাস্তবায়ন করেছে। প্রাথমিক স্তরে শিক্ষার্থী ভর্তি এখন প্রায় শতভাগ, ঝরে পড়ার হারও কম। বর্তমানে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তির হার প্রায় শতভাগ। এজন্য বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা ইউনিটের আর প্রয়োজন নেই বলেও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা মনে করছেন।
জানা গেছে, প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই এই ইউনিটের মূল কাজ ছিল বেসরকারি রেজিস্ট্রার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয় ও এনজিও পরিচালিত বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের এমপিও (বেতনের সরকারি অংশ) প্রদান। কিন্তু সরকার ২০১৩ সালের ১ জানুয়ারি দেশের সব রেজিস্ট্রার্ড বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে জাতীয়করণ করলে বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবায়ন ও পরিবীক্ষণ ইউনিটের কাজ শেষ হয়ে যায়। এতে প্রায় কর্মহীন হয়ে পড়ে এই ইউনিটের প্রায় অর্ধশত কর্মী, যাদের প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর থেকে পদায়ন করা হয়েছিল।
ওই ইউনিটের দু’জন কর্মচারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘সকল বিদ্যালয় জাতীয়করণের আওতায় নেয়ার পর স্বাভাবিক কারণেই আমরা ধরে নিয়েছিলাম আমাদের মূল কর্মস্থল প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরে (ডিপিই) চাকরি ন্যাস্ত করা হবে। কিন্তু সাড়ে চার বছরেও তা হয়নি। কারণ এখানে অতিরিক্ত, যুগ্ম ও উপসচিবের ১০/১১টি পদ রয়েছে। কাজ না থাকলেও এসব পদে বার বার কর্মকর্তা পদায়ন পাচ্ছেন। তারাও প্রায় অলস সময় পার করছেন, আমরাও বসে বসে চাকরি করছি।’
বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবায়ন ও পরিবীক্ষণ ইউনিটের প্রধান হলেন মহাপরিচালক। এছাড়াও পরিচালকের তিনটি পদ, উপ-পরিচালকের সাতটি ও সহকারী পরিচালকের দুটিসহ মোট ৫৫টি পদের মধ্যে ৫০ জন কর্মরত রয়েছে। এর মধ্যে মহাপরিচালকের পদটি যুগ্ম-সচিব পদমর্যাদার হলেও এই পদে বর্তমানে কর্মরত আছেন একজন অতিরিক্ত সচিব। আর উপ-সচিব পদমর্যাদার পরিচালকের তিনটি পদের মধ্যে দুটিতে কর্মরত আছেন একজন অতিরিক্ত সচিব ও একজন যুগ্ম-সচিব।
এই ইউনিটের মহাপরিচালক একেএম আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘এটা ঠিক যে, এমপিওভুক্ত সকল রেজিস্ট্রার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো জাতীয়করণ হওয়ায় আমাদের মূলত এখন আর কোন কাজ নেই। এজন্য আমরা নিজ উদ্যোগেই সারাদেশের জেলা ও উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস এবং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিদর্শন করি। আমরা বছরে টার্গেট করে ৩৬০টি প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করি। রমজান মাস ও বার্ষিক পরীক্ষার কারণে ডিসেম্বরে পরিদর্শন কার্যক্রম বন্ধ থাকে।’
এ বিষয়ে ডিপিই’তে কর্মরত একজন উপসচিব নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘প্রাথমিক বিদ্যালয়, জেলা ও উপজেলা শিক্ষা অফিস ডিপিই’র অধীনে। এগুলো পরিদর্শনের দায়িত্বও ডিপিই’র। বিদ্যালয় ও শিক্ষা অফিস পরিদর্শনের দায়িত্ব বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবায়ন ও পরিবীক্ষণ ইউনিটকে দেয়া হয়নি। তারা নিজ উদ্যোগে বিদ্যালয় পরিদর্শনের নামে সরকারি অর্থের অপচয় করছেন।’
এমপিওভুক্ত স্কুলগুলো জাতীয়করণ হওয়ার কারণে ২০১৩ সাল থেকে ওইসব স্কুলে ভবন নির্মাণ, শিক্ষক নিয়োগ ও তাদের বেতনভাতা প্রদানসহ প্রায় সব কাজই ডিপিই’র (প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর) অধীনে চলে গেছে জানিয়ে একেএম আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমরা এখন বিভিন্ন কারণে জাতীয়করণ থেকে বাদ পড়া স্কুল ও শিক্ষকদের করা মামলাগুলো মোকাবিলা করছি। যারা জাতীয়করণের আওতায় আসতে পারেননি তাদের কল্যাণ তহবিলের (বেসরকারি শিক্ষক কল্যাণ ট্রাস্ট) টাকা দিচ্ছ।’
সৌজন্যে: সংবাদ
No comments:
Post a Comment