প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী মহোদয়ের নিকট আমার প্রশ্ন

>>১। প্রধান শিক্ষকের বেতন যখন সহকারী শিক্ষকদের থেকে পর পর তিন ধাপ বাড়ানো হলো তখন দেশের সামর্থ্য ভালো ছিল। সহকারীদের বেলায় দেশের সামর্থ্য নেই এমন কথা ভাবার কারণ কী এবং তা কতটা যৌক্তিক।

>>২। সাড়ে তিন লক্ষ শিক্ষক আপনার আশ্বাসের প্রতি সম্মান দেখিয়েছেন, তার বিনিময়ে আপনি আপনার দেয়া অঙ্গিকারের প্রতি কতটা সুবিচার করছেন?

>>৩। আপনি শুধুমাত্র প্রধান শিক্ষককে সম্মানিত করে আর সহকারী শিক্ষকদের  মর্যাদা ফিরিয়ে না দিয়ে মান সম্মত প্রাথমিক শিক্ষা সত্যিই কী বাস্তবায়ন করতে পারবেন?

>>৪। যে দেশে ৩ (তিন)/৩.৫ (সাড়ে তিন) লক্ষ হাজার কোটি টাকা এক অর্থবছরে বাজেট হয়, সে দেশের প্রাথমিক শিক্ষার ভিত মজবুত করতে আপনার শিক্ষকের কথা ভেবে আপনার মন্ত্রণালয়ের সকল ধরণের বৈষম্য দূর করে প্রাথমিক শিক্ষার সার্বিক কার্যক্রমে গতিশীলতা আনার চেস্টা করবেন নাকি নিজের ব্যর্থতা ঢাকার জন্য দেশ প্রেম দেখাবেন।

>>৫। "যদি উদীয়মান ব্যাগ্র  হতে চাও শিক্ষা খাতে ব্যয় বরাদ্দ বাড়িয়ে দাও" -মনীষীর এই বাণীকে আপনি মিথ্যা বলতে পারবেন কী?

>>৬। জোর করে ঘর সংসার করলে সে ঘরে কতটা শান্তি ও উন্নতি আশা করা যায়, আমাদের ন্যায্য দাবি অগ্রাহ্য  করে আপনি কতটা প্রাথমিক শিক্ষার উন্নায়ন করতে পারবেন?

>>৭। প্রাথমিক শিক্ষার প্রাণ সহকারী শিক্ষকদের অবহেলা করে, তাঁদের মন ভেঙ্গে দিলে, তাঁরা ভাঙ্গা মন নিয়ে কী করে আপনার প্রাথমিক শিক্ষাকে চাঙ্গা করবে?

>>৮। নিচের মাসিক বেতন প্রাপ্তি স্বীকারোক্তি ফরম পূরণ করে, স্বাক্ষর করে আমি যখন শ্রেণি কক্ষে পাঠদানে যাবো তখন আমার পাঠ কেমন করে ফলপ্রসূ হবে? আপনি ও আপনার প্রশাসন আমার আমার দ্বারা কেমন করে মান সম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করবেন?

উক্ত বেতন বিবরণীতে ২,৩ ও ৪ নং ক্রমিকের সহকারী শিক্ষকদের জুনিয়র হওয়া সত্বেও ১ নং ক্রমিকের প্রধান শিক্ষকের সাথে সহকারীদের বেতন বৈষম্য কী পর্যায়ে আছে একটু ভেবে দেখবেন কী?

২ নং ক্রমিকের সম্মানিত শিক্ষক ২৫ বছর ধরে সহঃ শিঃ হিসেবে আছেন। আমি নিজেই ১৮ বছর ধরে সহঃ শি হিসেবে চাকুরি করে ৪ নং ক্রমিকে আছি। একাডেমিক বাদই দিলাম-পেশাগত  সি.ইন.এড, বি.ড ও এম.এড ডিগ্রি নিয়ে আজো পদোন্নতির ধারে কাছেও নেই।

>> ১২৫০০/- ( বারো হাজার পাঁচশ টাকা) তে ২,৩ ও ৪ ক্রমিকে আমাদের বেসিক শেষ এবং আমাদের প্রঃ শিঃ এর বেসিক বর্তমানে ২৩০০০/-( তেইশ হাজার টাকা)। ১০ গ্রেড পেলে হবে ২৯০০০/-(ঊনত্রিশ হাজার টাকা)। বেসিকের ব্যবধান ১৬৫০০/-ষোল হাজার পাঁচশ টাকা থেকেই যাবে। যেখানে বেসিক ব্যবধান ছিল ১০০/-(একশত টাকা)।

স্বাধীনতার পর থেকে বরাবরই প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্রঃ শিঃ এর পরের ধাপে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সহঃ শিঃ গণ পেয়ে এসেছেন। হঠাৎ করে সহকারী শিক্ষকগণ গুরুত্বহীন এবং প্রধান শিক্ষকগণ গুরুত্বপূর্ণ হওয়ার কারণ কী?

>>৯। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মেধাবী উচ্চশিক্ষিত প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত অভিজ্ঞতা সম্পন্ন সহকারি শিক্ষক থাকা সত্বেও তাঁদের পদোন্নতি ১০০% না করে একটি বিদ্যালয় ও একদল প্রশিক্ষিত দক্ষ শিক্ষকমন্ডলীকে পরিচালনার জন্য কোন যুক্তিতে একজন আনারি ও সদ্য সনদধারীকে প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ দেয়া হয়?

>>১০। বেতন বৈষম্য তথা মর্যাদা আদায়ে আন্দোলন প্রত্যাহার আমাদের যৌক্তিক দাবির সাথে একাত্মতা ঘোষণা ও তা পূরণের আশ্বাসের প্রেক্ষিতে হয়েছে। এটা আমাদের দূর্বলতা ছিল না, এটা ছিল আপনাদের প্রতি আমাদের বিশ্বাস। আর এ বিশ্বাসের সাথে যদি আপনারা আপনাদের ওয়াদার প্রতি সুবিচার না করেন তাহলে সহকারী শিক্ষকগণ কী তাঁদের ন্যায্য দাবি আদায়ে চুপ করে বসে থাকবে? সহকারী শিক্ষকগণের পীঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে তারা মর্যাদা আদায়ে দৃঢ় প্রত্যয়ী তাঁরা যে কোন কর্মসূচী পালন করতে প্রস্তুত।

আমাার সকল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ভাই-বোনদের কাছ থেকে গঠণমূলক মন্তব্য প্রত্যাশা করছি।

--মোরশেদ সরওয়ার (জুয়েল)

   সহঃ শিক্ষক

==============================