প্রাথমিক শিক্ষায় চলমান সংকট ও তা থেকে উত্তরণের উপায়। - ICT-তে জীবন গড়ি

Infotech Ad Top new

Infotech ad post page Top

প্রাথমিক শিক্ষায় চলমান সংকট ও তা থেকে উত্তরণের উপায়।

প্রাথমিক শিক্ষায় চলমান সংকট ও তা থেকে উত্তরণের উপায়।

Share This

আমাদের রাষ্ট্র নামক এই প্রতিষ্ঠানটি যাঁরা (সম্মানার্থে ) নিয়ন্ত্রন করেন তারা প্রায়শই একটি কথা বলে থাকেন, প্রাথমিক শিক্ষা হল বুনিয়াদি শিক্ষা, এই শিক্ষার সাথে যাঁরা (অবজ্ঞার্থে ) জড়িত অর্থাৎ সেই শিক্ষকগণ কে বলা হয় জাতি গড়ার কারিগর। আসলেই কি তাই? আমরা যাঁকে অবজ্ঞা করে কারিগর বলি সেই কারিগরের নেই  কোন সামাজিক স্ট্যাটাস!  সামাজিক, অর্থনৈতিক আর রাষ্ট্রীয় অবহেলায় তাঁদের প্রাণ প্রায় ওষ্ঠাগত। কী করে সেই রুগ্ন কারিগর একটি সবল জাতি উপহার দিতে পারে তা আমার মাথায় আসেনা। স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের পর প্রাথমিক শিক্ষার মান উন্নয়নে বেশ কতকগুলো পরিকল্পনা নেওয়া হয় যা নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবি রাখে। যেমন ১৯৭২ সালের সংবিধানে শিক্ষাকে মানুষের মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দান এবং এরই ধারাবাহিকতায়  ২৬ অক্টোবর, ১৯৭৩ সালে ’Primary School Ordinance' এবং ১৯৭৪ সালে Primary Education Taking Over Act-এর মাধ্যমে বিপুল সংখ্যক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পরিচালন, নিয়ন্ত্রণ ও ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব সরকার গ্রহণ করে। এর মাধ্যমে দেশের ৩৬,৬৬৬ টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কর্মরত সকল শিক্ষক এবং স্কুলের যাবতীয় সম্পদ সরকারি নিয়ন্ত্রণে চলে যায় এবং এই পর্যায়ে প্রাথমিক শিক্ষা অবৈতনিক করা হয়। ১৯৭২ সালের ২৬ জুলাই প্রখ্যাত বিজ্ঞানী ও শিক্ষাবিদ ড. কুদরাত-এ খুদাকে সভাপতি করে শিক্ষা কমিশন গঠনের জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয় যা ১৯৭৪ সালের মে মাসে ‘বাংলাদেশ শিক্ষা কমিশন রিপোর্ট’ নামে প্রকাশিত হয়। এটি পরবর্তীকালে ড. কুদরাত-এ-খুদার নামানুসারে ‘ড. কুদরাত-এ-খুদা শিক্ষা কমিশন রিপোর্ট’ নাম রাখা হয়। এই কমিশনে প্রাথমিক শিক্ষাকে ১৯৭৬ সাল থেকে ক্রমধারায় ১৯৮৩ সালের মধ্যে প্রথম শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত বাধ্যতামূলক করার সুপারিশ করা হয় যদিও রাজনৈতিক পট-পরিবর্তনের কারণে তা পূর্ণাঙ্গভাবে কার্যকর হতে পারেনি। পরবর্তী সময়ে একাধিক শিক্ষা কমিশন গঠিত হয় এবং প্রায় প্রত্যেকটি কমিশন রির্পোটে প্রাথমিক শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করার সুপারিশ করা হলেও সে সময়ে তা বাস্তবায়িত হয়নি। অবশেষে ১৯৯০ সালে জাতীয় সংসদ কর্তৃক ‘প্রাথমিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক আইন’ গৃহীত হয় এবং ঐ বছর ১৩ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রপতির সম্মতি লাভের মাধ্যমে বাংলাদেশ গেজেটের এক অতিরিক্ত সংখ্যায় বিজ্ঞাপিত হয়। ১৯৯২ সালে ১ জানুয়ারি থেকে সারা দেশের ৬৮টি থানায় বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা প্রবর্তন করা হয়। জাতি হিসাবে আমরা কতটা দুর্ভাগা তা এ চিত্রই বলে দেয়্। শিক্ষাকে মৌলিক অধিকার হিসাবে স্বীকৃতি দেবার ২০ বছরের মাথায় এসে বাধ্যতামুলক প্রাথমিক শিক্ষার বাস্তবায়ন। মাঝখানের সময়টুকুতে শুধু বানরের তৈলাক্ত বাঁশে  ১ম মিনিটে ২ মিটার ওঠা তো পরের মিনিটে দেড় মিটার নেমে আসা। অবশ্য এ ওঠা-নামার মাঝে উন্নতি যে হয়নি তা নয়, এর মধ্যে প্রাথমিক শিক্ষার পরিমানগত একটা বিশাল পার্থক্য দাড়িয়ে গেছে, তার পথ ধরে শিক্ষার গুনগত মান ও কিছুটা উন্নতি হয়েছে, অবকাঠামোগত সুবিধাও অনেকখানি বেড়েছে। কিন্তু এত সবকিছুর মূলে যে বা যাঁরা রুধিধারার মত কাজ করেছে, সেই প্রাথমিক শিক্ষক গোষ্ঠীর ভাগ্য ও জীবন মান বদলায়নি এতটুকুও। বাংলাদেশে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে প্রধানত চার ধরনের বিদ্যালয় ছিল । যথা- সরকারি বিদ্যালয়, পরীক্ষণ বিদ্যালয় যা PTI এর সাথে সংযুক্ত, নিবন্ধীকৃত বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং কমিউনিটি বিদ্যালয়। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং পরীক্ষণ বিদ্যালয়গুলো সম্পূর্ণরূপে সরকারি অর্থে পরিচালিত হলেও বেতন ছিল অতি নগন্য। অন্যদিকে নিবন্ধীকৃত বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা তাদের বেতন স্কেলের কেবলমাত্র শতকরা ৯০ ভাগ সরকারের কাছ থেকে পেতেন। আর কমিউনিটি বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা সরকারের কাছ থেকে নির্ধারিত হারে কিছু বেতন পেতেন যা নিবন্ধীকৃত বেসরকারী বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের থেকেও কম। অর্থাৎ এ্কই প্রাথমিক সেকশনে তিন রকমের পারিশ্রমিক। একদিকে নির্দিষ্ট সময় অন্তর অন্তর পে-স্কেলের নাম দিয়ে  প্রাথমিক শিক্ষকগণের সরকারি অংশকে লাইফ সাপোর্ট দিয়ে টিকিয়ে রাখা আর অন্য অংশকে আধা-মরা করে বাঁচিয়ে রাখা। লাইফ-সাপোর্ট কেন বললাম তা একটু ব্যাখ্যা করে বলি, আমি একজন প্রাথমিক সহকারি শিক্ষক,২০০৪ সালে আমি যখন নিয়োগ পেলাম তখন আমার বেতন স্কেল ছিল ১৬২৫/- সবমিলিয়ে আমার বেতন আসত ৩১০০ টাকার কিছু কম বা বেশি। তখন এই ৩১০০ টাকায় যে ভাবে, যে মানের জীবন নির্বাহ করতাম, এখন চাকুরীর ১২ বছরে এসে সব মিলিয়ে  ১২০০০ টাকা বেতনে সেই একই রকম, (নুন আনতে পানতা ফুরোনো)। অতি সম্প্রতি আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী  প্রাথমিক শিক্ষকের নিবন্ধীকৃত  ও কমিউনিটি বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের (আধা-মরা)  চাকুরী একটি ঘোষণার মাধ্যমে জাতীয়করণ করেছেন। এটি নিঃসন্দেহে একটি সাহসী পদক্ষেপ যার জন্য আমরা সারা-জীবন তাঁর নিকট কৃতজ্ঞ থাকব।  স্বাধীনতা পরবর্তী তাঁরই পিতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান তৎকালীন ৩৬,৬৬৬ টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কর্মরত সকল শিক্ষকের চাকুরী জাতীয় করণ করেছিলেন।  এর মধ্যদিয়ে স্বাধীনতা পরবর্তী সময় হতে আজ অবধি প্রাথমিক শিক্ষায় যে ডাবল স্ট্যান্ডার্ড(Double-Standard) প্রচলিত ছিল তার অবসান হল।  ডাবল স্ট্যান্ডার্ড বলতে একই সেকশনে একই কাজ করে শিক্ষকের পারিশ্রমিক ছিল ভিন্নরকম যা ছিল একজন প্রাথমিক শিক্ষকের জন্য তথা জাতির জন্য অপমান জনক। এটি আর ও অনেক আগে হওয়া উচিৎ ছিল, কিন্তু জাতি হিসাবে  জাতি গড়ার কারিগরদের প্র্রতি আমরা সুবিচার করতে পারিনি। এতো গেল, প্রাথমিক শিক্ষক হিসেবে শ্রেনী সংগ্রামের মধ্য দিয়ে আমাদের এক কাতারে হওয়ার গল্প। কিন্তু এক হলেই কি সব সমস্যার সমাধান হল? একটি সমস্যার সমাধান হল বটে কিন্তু হাজার সমস্যার সৃষ্টি করে এই প্রাথমিক শিক্ষা খাতকে আগামী দুই দশক বা তার থেকেও বেশি সময় পিছিয়ে দেওয়া হল। কিন্তু কে বা কারা সৃষ্টি করল এই সমস্যা? সে প্রশ্নে উত্তর আমরা একটু পরে খুঁজব। ২৬ হাজার বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সরকারি করণের ফলে উক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোতে ২৬ হাজার প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য হওয়ার কথা এবং উক্ত শুন্য পদসমুহে সহকারী শিক্ষকদের প্রমোশন দেওয়া হবে বলে, তারা আশায় বুক বেধেছিল। এমনিতেই দীর্ঘ দিন প্রমোশনের বিষয়টি ঝুলে থাকা, প্রমোশন প্রথায় কোটা পদ্ধতি বিদ্যমান রাখার কারনে সহকারি শিক্ষকদের মাঝে একধরনের হতাশা ও ক্ষোভ বিরাজ করছিল। কিন্তু এক্ষেত্রে কোন নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে, স্ব-পদেই বহাল রাখা হল ঐ প্রতিষ্ঠানে কর্মরত প্রধান শিক্ষককে যা বাংলাদেশের ইতিহাঁসে নজিরবিহীন বলেই প্রতীয়মান হয়। কোন ক্ষমতাবলে এই অনিয়ম করা হল তা সহকারি শিক্ষকেরা বুঝতে পারেনি। অথচ জাতীয়করনের পর ঐসব বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের পদ পদোন্নতির মাধ্যমে পূরণ করাই ছিল নিয়ম। ফলে সহকারি শিক্ষকদের সকল আশা ছাই চাপা পড়ে। সহকারী শিক্ষকগন নিজেদের বঞ্চিত ভাবতে শুরু করেন। অবশ্য এই বঞনার শুরু এটা দিয়ে নয়। এই বঞ্চনার শুরুটা হয়েছলি আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যখন প্রধান শিক্ষকগনকে দ্বিতীয় শ্রেনীর মযর্দা দেওয়ার ঘোষনা দিলেন তখন থেকে। প্রাথমিক শিক্ষকগনের একটি অংশ যাঁরা পুর্ব হতেই সরকারী ছিল তারা দীর্ঘ দিন যাবত তাদের জীবন মান উন্নয়নের জন্য বেতন-ভাতাদি বৃদ্ধি, শতভাগ প্রমোশন সহ আরও অনেক বিষয় নিয়ে সরকারের নিকট দাবী জানিয়ে আসছিল। এ দাবী আদায়ের আন্দোলনে সহকারিরাই ছিল অগ্রভাগে তুলনার দিক দিয়ে প্রধান শিক্ষকগন সংখ্যায় নগন্য। কিন্তু সহকারি শিক্ষকদের এই বিশাল অংশকে বিবেচনায় না নিয়ে কেবল একতরফাভাবে প্রধান শিক্ষকদের দ্বিতীয় শ্রেনীর মর্যাদা দেওয়া হল। সহকারি শিক্ষকরা কখনই তাদের দাবী দাওয়ায়, প্রধান শিক্ষকগনের দ্বিতীয় শ্রেনীর বিরোধীতা করেনি। কিন্তু এর ফলে সহকারি ও প্রধান শিক্ষকের মাঝে বেতনের যে বিশাল পার্থক্য সৃষ্টি হল তা সহকারি শিক্ষকদের মাঝে বঞ্চনার অনুভতিকে বহুগুণে বাড়িয়ে তুলল। সহকারি শিক্ষক গন প্রধান শিক্ষকদের থেকে তিন ধাপ নিচে চলে গেলেন।  অথচ পুর্বে (২০০৬ সালে) সহকারি ও প্রধান শিক্ষকের মাঝে বেতন স্কেলে পার্থক্য ছিল মাত্র ১০০ টাকা অর্থাৎ সহকারি শিক্ষকগন ছিল বেতন স্কেলের একধাপ নিচে। সহকারি শিক্ষকগনই বিদ্যালয়ের চালিকা শক্তি, অথচ তাদের প্রাপ্তি বলতে কিছুই নেই, বরং তারা হারিয়েছে অনেক দিয়েছে বেশি এবং এখনও দিয়ে যাচ্ছে। সহকারিদের বঞ্চনার এখানেই শেষ নয়, সম্প্রতি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পদোন্নতির জন্য গ্রেডেশন তালিকা প্রস্তুত করার আদেশ জারি করা হয়। সেক্ষেত্রেও জাতিয়করন বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা বিপত্তি সৃষ্টি করে। আইন অনুযায়ী যেদিন হতে তাদের জাতীয়করন করা হয়েছিল সেদিন হতেই তাদের যোগদান ও জৈষ্ঠতা হিসেব করার কথা। কিন্তু কোন এক অদৃশ্য হাতের ইশারায় তাদের প্রদর্শিত পূর্বের যোগদানের তারিখ হতে ৫০ শতাংশ সময়কালকে তাদের চাকুরীকাল হিসেবে গণ্য করার আদেশ জারি করে গেজেট প্রকাশ করা হয়। ফলে গ্রেডেশন তালিকাতেও তারা উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সরকারি প্রাথমিক সহকারি শিক্ষকের সিনিয়র বনে যান!!!! গ্রেডেশন তালিকায় পিছিয়ে পড়া সহকারি শিক্ষকেরা আজ গভীর হতাশায় নিমজ্জিত। সহকারি শিক্ষকগন আজ তাই বিদ্যালয়ের পাঠদান ছেড়ে দাবী আদায়ের আন্দোলনে মাঠে নামতে বাধ্য হয়েছে। সরকারের অনেক মহল এ আন্দোলনকে দমানোর জন্য এটিকে রাজনৈতিক রুপ দেওয়ার অপচেষ্টায় লিপ্ত। সহকারি শিক্ষকদের দাবী রুটি-রুজির দাবী, তাদের আন্দোলন বঞ্চনা থেকে নিষ্কিৃতির আন্দোলন।

নব্য জাতীয়করণের ফলে দীর্ঘ দিনের বিরাজমান এক সমস্যার সমাধান মিললেও এই সেকশনে এক একের পর এক গৃহিত পদক্ষেপের ফলে যেসকল সমস্যার সৃষ্টি হল একনজরে দেখে নিই-

ক) সহাকারি শিক্ষক ও প্রধান শিক্ষকদের মাঝে বৈষম্য ও দ্বন্দ সৃষ্টিহল যা বর্তমানে এবং ভবিষ্যতে পুরো প্রাথমিক শিক্ষার বিপর্যয়ের জন্য যথেষ্ট।

খ) নব্যজাতীয়করণ কৃত বিদ্যালয়সমুহে  প্রমোশনের মাধ্যমে প্রধান শিক্ষকের পদ পুরণ না করে উক্ত প্রতিষ্ঠানের প্রধানদের স্ব-পদে বহাল রাখা যা একটি নিয়মের পুরোপুরি লংঘন। এর ফলে প্রাথমিক শিক্ষাকে ইচ্ছে করে ধ্বংসের কিনারে নিয়ে যাওয়া হল। কারন, এসকল বিদ্যালয়ে শিক্ষকগনের নিয়োগের মানদন্ড  ছিল পুরোপুরি ভিন্ন যা কোন মতেই স্বচ্ছ ছিলনা। আজ যাঁরা স্ব-পদে বহাল থাকলেন, তারা ‍যদি একটি স্বচ্ছ প্রকিয়া অর্থাৎ নিয়োগ প্রক্রিয়ার মধ্যদিয়ে যেতেন, তাহলে প্র্র্র্রধান শিক্ষক তো দুরের কথা, সহকারি শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার যোগ্যতাও হারাতেন একথা ১০০ ভাগ সত্য। অথচ প্রমোশন প্রার্থী যাঁরা এতদিন তীর্থের কাকের মত চেয়েছিলেন তারা তাদের তুলনায় অনেক যোগ্য। যোগ্য এই জন্য বলছি, তারা আর যাই হোক একটি নিয়োগ পরীক্ষার মা্ধ্যমে এ পদে এসেছেন, যা অপেক্ষাকৃত স্বচ্ছ। তাছাড়া এই পদে এখন অনেক উচ্চ ডিগ্রীধারী মেধাবী মুখ ইতমধ্যেই প্রবেশ করেছে। তাহলে এটি করা হল কার স্বার্থে? এটা আমি আপনি আমরা সবাই জানি, কিন্তু ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস এদের বেতন বেশি দেওয়ার জন্য সরকার মুখিয়ে থাকে, আর শিক্ষদের বেলায় বলে, ’শিক্ষকদের একটু বেশি দিয়ে ফেলেছি’ । আমরা কথায় কথায় প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়নের কথা বলি তাহলে এটি কি হল? যা হবার তাই হল, এর পরিনতি ভোগ করার জন্য জাতিকে প্রস্তুত করুন। হায়! রুগ্ন জাতি! রুগ্ন দেশ ! ছি! ছি! ছি!

গ) ৩ নং সমস্যা সৃষ্টি করা হয়েছে, নব্য জাতীয়করনকৃত শিক্ষকদের যোগদানের তারিখ হতে ৫০ শতাংশ সময়কালকে তাদের চাকুরীকাল হিসেবে গণ্য করার আদেশ জারি করে গেজেট প্রকাশ করার মাধ্যমে। এতে করে শিক্ষকদের একটি অংশকে না চাইতে অনেক কিছু দিয়ে দেওয়া হয়েছে যা তাদের কল্পনার ও বাইরে। এই বেশি দেওয়ার ব্যাপারটা যতটুকু না যৌক্তিক তার থেকেও বেশি রাজনৈতিক এবং আমলা তান্ত্রিক। এতে করেও অনেক যোগ্য শিক্ষক প্রমোশন হতে বঞ্চিত হবেন। এত বঞ্চনা নিয়ে কোন উচ্চ শিক্ষিত ও মেধাবী মুখ এই সেকশনে তার সেবা দিতে চাইবেনা যদি দুর্ভাগ্যক্রমে কেউ এসেও থাকেন, তাহলে বয়স থাকলে পথ খুজবেন অন্যত্র চলে যাওয়ার।  আর না থাকলে দাবী আদায়ে নামতে হবে রাজপথে আন্দোলনে। আর সে পথটাও তো অত্যন্ত বন্ধুর ও অমসৃন !

এসকল গৃহীত পদক্ষেপের ফলে প্রাথমিক শিক্ষায় অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে এবং ভবিষ্যতে এ সংকট আরও গভীরতর রুপ নেবে। তাই সরকারের উচিৎ এই বিষয়টি এখনই আমলে নেওয়া এবং দ্রুত এসকল সমস্যার একটি যৌক্তিক সমাধান দেওয়া তা নাহলে আগামী প্রজন্মকে এর ফলাফল ভোগকরতে হবে যাতে করে জাতি হিসাবে আমরা অনেক পিছিয়ে পড়ব।

উপরোক্ত সমস্যা সমাধানে এবং প্রাথমিক শিক্ষার মান উন্নয়নে সরকারের এখনই যা করনীয় তা হল:-

১) সহকারি ও প্রধান শিক্ষকদের মাঝে বেতন বৈষ্যম্য কমিয়ে আনা অর্থাৎ প্রধান শিক্ষকেদর একধাপ নীচে বেতন নির্ধারন করা। যেহেতু একই প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বিভিন্ন শিক্ষাগত যোগ্যতার শিক্ষক এখানে কর্মরত আছেন, তাই সরকারের অার্থিক সংগতির বিষয়টি মাথায় রেখে যোগ্যতা ভিত্তিক বেতন স্কেল নির্ধারণ করা যেতে পারে। এত করে এখানে মেধাবী ও উচ্চ শিক্ষিতরা এই পেশায় আসতে অনুপ্রানিত হবে।

২) প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে বিদ্যমান কোটা পদ্ধতি ও শিক্ষাগতযোগ্যতার মানন্ডের ভিন্নতা না করে নারী পুরুষ নির্বিশেষে সকলের একই শিক্ষাগত যোগ্যতার মানদন্ডের ভিত্তিতে নিয়োগ দিতে হবে। শিক্ষক নিয়োগে এখন যে ধরনের প্রশ্নপত্র প্রনয়ন করা হয় তাতে একজন এসএসসি পাশ করা মহিলার কোয়ালিফাই করা খুবই কঠিন। আসতে পারলেও সেটা কোন সুস্থ ও স্বচ্ছ পথে নয়। মামা-খালুর তদবির আর ঘুষ প্রদানের মাধ্যমে। আর শতকরা ৬০ ভাগ কোটা  এখন  আর টিকিয়ে রাখার দরকার আছে বলে মনে হয়না। কারন নারীরা এখন আর সেই আগের মত পিছিয়ে নেই। কোন কোন সূচকে নারীরা এখন পুরুষদের তুলনায় অনেক এগিয়ে।

৩) শুধু চাকুরীতে যোগদানের সময়কালকে প্রমোশনের মাপকাঠি না রেখে এ ক্ষেত্রে প্রার্থীর যোগ্যতার বিষয়টি ও এর সাথে যোগ করতে হবে যাতে করে প্রধান শিক্ষক এর মত একটি গুরুত্বপুর্ন পদে কোন অযোগ্য ও অদক্ষ্ লোক না বসতে পারে।  এজন্য পিএসসি বা অধিদপ্তর যার অধীনেই হউক সহকারী শিক্ষকদের মধ্য হতে একটি প্রমোশনাল পরীক্ষার আযোজন করা যেতে পারে।

৪) নব্যজাতীয়করণ কৃত ২৬ হাজার প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষকের পদকে শুন্য পদ হিসাবে গন্য করে এবং দেশের অন্যান্য প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের বিদ্যমান শুন্য পদে সহকারি শিক্ষকদের মধ্য হতে উপরোক্ত মানদন্ডের(৩নং) ভিত্তিতে প্রধান শিক্ষক পদে প্রমোশন দিতে হবে। এতে করে সহকারি শিক্ষকদের প্রমোশন বঞ্চনা অনেক কমে আসবে। এবং প্রাথমিক শিক্ষা আগের থেকে অনেক গতিশীল হবে।

৫) প্রাথমিক শিক্ষায় প্রদান শিক্ষক পদটিকে এন্ট্রি পদ হিসাবে বিবেচনায় এনে সহকারী শিক্ষকদের মধ্য হতে শতভাগ প্রমোশনের ভিত্তিতে এপদটি পুরন করতে হবে। যাতে করে এ বিভাগ অনেক দক্ষ ও অভিজ্ঞ প্রধান শিক্ষক পাবে।

দেশের প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজিয়ে একে যুগোপযোগী না করলে আমরা জাতি হিসাবে সামনে এগিয়ে যেতে পারব না। প্রাথমিক শিক্ষা যদি হয় বুনিয়াদি শিক্ষা্ এবং এ শিক্ষাক্ষেত্রে প্রাথমিক শিক্ষক যদি হয় জাতির গড়ার কারিগর তবে সেই প্রাথমিক শিক্ষককে দিতে সর্বোচ্চ সম্মান। তা না হলে আমরা জাতি হিসাবে অকৃতজ্ঞ জাতি হিসেবে পরিনত হব।


মোঃ গোলজার আলী
শিক্ষক, আরটিকেল রাইটার  ও ট্রেইনার (ইংরেজী)।
এ্যাডমিন
ইনফোটেকলাইফ.কম
Email: amiodhara4u@gmail.com
Mobile: 01712249709
ফেসবুক: http://www.facebook.com/goljar.ali



No comments:

Post a Comment

Infotech Post Bottom Ad New

Pages