অষ্টম পে-স্কেল নিয়ে চলমান বিতর্ক সম্পর্কে মোহাম্মদ ফরাস উদ্দিন আহমেদ যা বললেন। - ICT-তে জীবন গড়ি

Infotech Ad Top new

Infotech ad post page Top

demo-image
download

অষ্টম পে-স্কেল নিয়ে চলমান বিতর্ক সম্পর্কে মোহাম্মদ ফরাস উদ্দিন আহমেদ যা বললেন।

Share This
downloadপ্রশ্ন: অষ্টম বেতন কমিশনের রিপোর্ট প্রশংসিত হলেও শিক্ষকেরা এর বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেমেছেন, তাঁদের প্রতি অবিচার করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন। কমিশনের সভাপতি হিসেবে বিষয়টি কীভাবে দেখছেন?


মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন : নতুন বেতন কমিশন রিপোর্টে সব ক্ষেত্রে বেতন প্রায় দ্বিগুণ বাড়ানো হয়েছে। স্বীকার করতে হবে, এটি দুঃসাহসিক কাজ। এ নিয়ে সর্বস্তরে যে ইতিবাচক প্রবাহ সৃষ্টি হওয়া উচিত ছিল, তা হতে দেওয়া হয়নি। বিভিন্ন মহলের প্রতিক্রিয়া দেখে মনে হচ্ছে, একটি খারাপ কাজ হয়েছে। এ নিয়ে সত্যিই আমার মনে খেদ আছে।



প্রশ্ন: কিন্তু অনেকেই বেতন কমিশনকে দায়ী করছেন।

মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন : বেতন কমিশনকে দায়ী করার সুযোগ নেই। কমিশনের কাজ হলো সুপারিশ করা, এটি গ্রহণ করা কিংবা বাস্তবায়ন করা সম্পূর্ণ সরকারের এখতিয়ার। ভারত বা অন্যান্য দেশে বেতন কমিশনের আকার খুব ছোট হয়, কিন্তু আমাদের কমিশন ছিল ১৭ সদস্যের। এতে কয়েকজন শিক্ষক প্রতিনিধিও ছিলেন। গত ২১ ডিসেম্বর যেদিন আমরা অর্থমন্ত্রীর কাছে রিপোর্ট জমা দিই, একজন ছাড়া সবাই উপস্থিত ছিলেন। ব্যক্তিগত কাজ থাকায় তিনি সই দিয়ে আগে আগেই চলে গিয়েছিলেন। অর্থাৎ এটি ছিল ঐকমত্যের সুপারিশ। এখানে যেটি ব্যত্যয় ঘটেছে তা হলো, অন্যান্য দেশে এসব কমিশনের সুপারিশ মন্ত্রিসভা কমিটিতে বিবেচনা করা হয়। এখানে করেছে সচিব কমিটি। তাঁরাও একটি পক্ষ।



প্রশ্ন: আপনারা যে সুপারিশ করেছেন আর সরকার যেটি চূড়ান্ত করেছে, তার মধ্যে পার্থক্য কতটা?

মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন : পার্থক্য বেশি নয়। কিন্তু কয়েকটি ক্ষেত্রে তাৎপর্যপূর্ণ পার্থক্য হয়েছে। যেমন কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী ঔপনিবেশিক আমলের শ্রেণি প্রথা বিলোপ করা হয়েছে। এবং সেখানে এফিসিয়েন্সি বার বা দক্ষতার বাধা বলে যে দুষ্ট প্রকৃতির জিনিস ছিল, সেটি দূর করা হয়েছে। বেতন বাড়ানোর ক্ষেত্রেও ওপরের দিকে সামান্য কমানো এবং নিচের দিকে কাঙ্ক্ষিতভাবেই বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু বেতন কমিশন ১৬টি স্কেল বা স্তর সুপারিশ করলেও সেটিতে স্তর ২০টি করতে গিয়ে নতুন সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে।

কমিশনের উদ্দেশ্য ছিল ছয়জনের পরিবার যাতে সম্মানজনকভাবে জীবন যাপন করতে পারে এবং প্রজাতন্ত্রের কর্মীরা সর্বোচ্চ উৎপাদনশীলতা ও গতিশীলতা দিয়ে রাষ্ট্রকে সেবা দিতে পারেন। এরপর রাষ্ট্র তাঁদের দুর্নীতিমুক্ত থাকার ব্যাপারেও অনুশাসন দিতে পারবে। এ কারণেই বেতন বৃদ্ধির হারটা বেশি ছিল। বেতনের বাইরে আমরা একটি সমৃদ্ধি সোপান ব্যাংক, বিমা, শিক্ষা ভাতা, বাড়িভাড়া ভাতার বৃদ্ধি ও যৌক্তিক করার যে সুপারিশ করেছিলাম, সেগুলোও সরকার গ্রহণ করেছে। দু-একটি ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম হওয়ায় বিতর্ক দেখা দিয়েছে। আরেকটি কথা, বেতন কমিশন সুপারিশ করে গত ডিসেম্বরে। আর এ বছরের সেপ্টেম্বরে সরকার তা গ্রহণ করে। এই দীর্ঘ সময়ের কারণে বিভিন্ন স্বার্থের শাখা-উপশাখা ও ষড়যন্ত্র ডালপালা মেলেছে। এটি আরও আগে করা উচিত ছিল বলে মনে করি।



প্রশ্ন: বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অভিযোগ, সপ্তম বেতনকাঠামো থেকে এবার তাঁদের পদমর্যাদা কয়েক ধাপ নামিয়ে দেওয়া এবং সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে।

মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন : আমি শিক্ষকদের প্রতি অত্যন্ত শ্রদ্ধাশীল। সপ্তম বেতনকাঠামো থেকে বর্তমান বেতনকাঠামোয় যদি তাঁদের পদমর্যাদার অবনমন ঘটে, সেটি ঘোরতর অন্যায় এবং তার যৌক্তিক মীমাংসা হওয়া দরকার। এখানে একটি বিষয় পরিষ্কার করা দরকার, কোন গ্রেডে কত বেতন হবে, সেটি ঠিক করেছে কমিশন। কিন্তু কোন গ্রেডে কারা থাকবেন, সেটি ঠিক করার এখতিয়ার সরকারের। আমি যতটা জানি, সপ্তম বেতনকাঠামোয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকেরা দ্বিতীয় গ্রেডে ছিলেন। সে সময় এর বেতন ছিল ৩৩ হাজার ৫০০ টাকা। আমরা সুপারিশ করেছিলাম ৭০ হাজার টাকা। সরকার ৬৭ হাজার টাকা চূড়ান্ত করেছে। অর্থাৎ, বেতন দ্বিগুণ হয়েছে। এখন অধ্যাপকেরা যদি দ্বিতীয় গ্রেডে ও প্রভাষকেরা নবম গ্রেডে থাকেন, তাহলে তো তাঁদের আপত্তি থাকতে পারে না।



প্রশ্ন: তাঁদের আপত্তি হলো, আগে অধ্যাপকদের শুরু দ্বিতীয় গ্রেড পেলেও সিলেকশন গ্রেডের মাধ্যমে প্রথম গ্রেডে যেতে পারতেন। সিলেকশন গ্রেড রহিত হওয়ায় তাঁরা সেই সুযোগ থেকে বঞ্চিত।

মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন : এর সমাধানও আমি বলেছি। নবম গ্রেডে প্রভাষকেরা আছেন। যেমন জনপ্রশাসনে প্রকৌশলী, চিকিৎসক, পুলিশ ও সেনা কর্মকর্তারাও আছেন। এখন শিক্ষক বন্ধুরা যে প্রভাষকদের জন্য সপ্তম গ্রেড দাবি করছেন, সেটি বোধ হয় ঠিক নয়। তাঁদের নবম থেকে দ্বিতীয় গ্রেডে যাওয়ার জন্য সিঁড়ি তৈরি করতে হবে। তারপর অধ্যাপকেরা যাতে একটি নির্দিষ্ট সময় ও নির্দিষ্ট অনুপাতে জ্যেষ্ঠ অধ্যাপকের পদ পেতে পারেন, সেই ব্যবস্থা করতে হবে। আমার জানামতে, সরকার এটি করতে রাজি আছে। সে ক্ষেত্রে সপ্তম বেতন কমিশনের সঙ্গে কোনো পার্থক্য থাকছে না। তাহলে আন্দোলন কেন?


প্রশ্ন: কিন্তু আগে জ্যেষ্ঠ অধ্যাপকেরা সচিবের পদমর্যাদা পেতেন। এখন সচিবদের ওপর আরও দুটি পদ সৃষ্টি করা হয়েছে।

মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন : মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও মুখ্য সচিব সব সময়ই গ্রেডের বাইরে ছিলেন। আবার সব প্রথম গ্রেড মানেই সচিব নন। সচিবের পদ ৭০টি। আর প্রথম গ্রেড পান কয়েক শ সরকারি কর্মকর্তা। আমি মনে করি, প্রথম গ্রেড পাওয়াটাই মুখ্য। অধ্যাপকদের পদোন্নতি দিয়ে সেখানে নিয়ে গেলে সমস্যা থাকে না। এরপর যে প্রশ্নটি এসেছে, তা হলো পদমর্যাদার। ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স। এ নিয়ে আদালতে মামলা-মোকদ্দমাও হয়েছে। আমরা কমিশনের পক্ষ থেকে কমিশন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য বিশেষ মর্যাদারও সুপারিশ করেছিলাম, যদিও এর সঙ্গে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়কে যুক্ত করা উচিত ছিল। কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানিত শিক্ষকেরা তাঁদের বুয়েটের সঙ্গে তুলনা করায় আপত্তি তুলেছেন।

২০১২ সালে আপৎকালীন ব্যবস্থা হিসেবে কয়েকটি জ্যেষ্ঠ সচিবের পদ সৃষ্টি করা হয়। এটি না করলে জনপ্রশাসনে অচলাবস্থা দেখা দিত। সেটিকে গ্রেডের মানদণ্ডে দেখাও বোধ হয় ঠিক হবে না।



প্রশ্ন: শিক্ষকেরা আলাদা বেতন কমিশনের দাবি করেছেন।

মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন : বেতন কমিশন বলেছে, যেসব বিভাগ বা প্রতিষ্ঠানের বেতন সরকারি কোষাগার থেকে দেওয়া হয়, সেগুলো একই বেতনকাঠামোয় হওয়া উচিত। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা একদিকে সপ্তম বেতনকাঠামোর সমমর্যাদা চাইছেন, আরেক দিকে পৃথক বেতনকাঠামোরও দাবি করছেন। এটি যৌক্তিক নয়। আলাদা বেতন কমিশন হলে তার অর্থের উৎস নিয়েও ভাবতে হবে। ভারত বা শ্রীলঙ্কার বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থায়নের একমাত্র উৎস সরকার নয়। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য আলাদা বেতনকাঠামোর প্রশ্ন এলে অর্থায়নের প্রশ্নটিও সামনে আসবে। আর কলেজশিক্ষকদের জন্য আলাদা কর্মকমিশন গঠনের কথা হচ্ছে দীর্ঘদিন ধরেই। এর সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কোনো সম্পর্ক নেই।



প্রশ্ন: এখন বেতনকাঠামো নিয়ে যে সমস্যা তৈরি হয়েছে, তার সমাধান আসবে কীভাবে? শিক্ষকেরা আন্দোলনে আছেন।

মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন : দ্রুতই এ সমস্যার সমাধান হওয়া উচিত। যতটা জানি, এ ব্যাপারে সরকারও অনেক দূর এগিয়েছে। বিষয়টি পুনর্বিবেচনায় জ্যেষ্ঠ মন্ত্রীদের নিয়ে মন্ত্রিসভা কমিটি করা হয়েছে। আলোচনার জন্য মুক্তমন ও সদিচ্ছা থাকা প্রয়োজন। আমার মনে হয়, সরকারের সেটি আছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধুরা যেসব মন্তব্য করেছেন, তা ইতিবাচক নয়। দ্বিতীয়ত, তাঁরা বলছেন, দাবি না মানলে ১ নভেম্বর থেকে লাগাতার ধর্মঘট হবে। হুমকির মুখে সুষ্ঠু আলোচনা হতে পারে না। মুক্তমনে আলোচনার পরিবেশ সৃষ্টির দায়িত্ব শিক্ষক বন্ধুদেরই।

বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, এডিবিসহ আন্তর্জাতিক সব সংস্থাই স্বীকার করেছে, গত কয়েক বছরে বাংলাদেশে যে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও সামাজিক রূপান্তর হয়েছে, তা দৃষ্টান্তমূলক, অনুসরণীয়। আগামী ২৫ বছরে বাংলাদেশ উন্নত দেশের কাতারে চলে যাবে। এই সাফল্যের প্রতি যদি শিক্ষকেরা সংবেদনশীল হন, তাহলে তাঁদের উচিত হবে না এমন কিছু করা, যাতে সরকার ক্ষতিগ্রস্ত কিংবা দেশের উন্নয়ন ব্যাহত হয়।



আপনাকে ধন্যবাদ। 

মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন :  আপনাকেও ধন্যবাদ।

(সরকারি বেতন ও সেবা কমিশনের চেয়ারম্যান এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনের দেয়া এ সাক্ষৎকারটি নিয়েছেন প্রথম আলোর সাংবাদিক সোহরাব হাসান)

ইনফোটেকলাইফ.কম এর পাঠকবৃন্দের জন্য এটি তুলে ধরা হল। 
Comment Using!!

1 comment:

kashem said...

Primary school's teacher "s post are block post .there must be right to get time scale or selection grade.mr.farasuddin did not think about this.

Post a Comment

Infotech Post Bottom Ad New

Pages

undefined