
অষ্টম বেতন স্কেলে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের বেতন ১১ তম গ্রেডে নির্ধারণসহ কয়েকটি দাবিতে আন্দোলনরত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের আন্দোলনও প্রত্যাহার করা হয়েছে। গত বুধবার প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আলমগীরের সঙ্গে আন্দোলনে নেতৃত্বে থাকা প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক ফেডারেশনের নেতাদের বৈঠকের পর এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পরে ফেডারেশনের নেতা নাসরীন সুলতানা প্রথম আলোকে বলেন, মহাপরিচালক তাঁদের বিষয়টি নিয়ে মন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলবেন। বিষয়টি যাতে বেতন বৈষম্য নিরসন সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে আলোচনা হয় সে জন্য বলেছেন। এ জন্য তাঁরা আগামীকাল বৃহস্পতিবার থেকে কর্মসূচি প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী, ৪ অক্টোবর থেকে আগামীকাল পর্যন্ত চার ঘণ্টা করে কর্মবিরতি পালনের কথা ছিল সহকারী শিক্ষকদের। আর ১০ থেকে ১৪ অক্টোবর পর্যন্ত পূর্ণদিবস কর্মবিরতির কর্মসূচি ছিল তাঁদের। উল্লেখ্য, এর আগে মহাপরিচালকের সঙ্গে বৈঠকের পর আন্দোলন থেকে সরে আসেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক সমিতি। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, শিক্ষকেরা আন্দোলন প্রত্যাহার না করলে তাঁদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে শিক্ষক নেতাদের জানানো হয়েছে। এদিকে কেন্দ্রীয় নেতাদের এমন হঠকারি সিদ্ধান্তে বাংলাদেশের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা লাখো শিক্ষক হতাশা ব্যক্ত করেছেন। অন্তত ফেসুবক সহ বিভিন্ন সোসাল সাইটগুলোতে সাধারণ শিক্ষকদের মন্তব্যসমুহ পড়লে এটাই পরিস্কার হয় যে, তাদের সাথে কেন্দ্রীয় নেতারা প্রতারনা করেছেন। এদিকে গত ৫.১০.২০১৫ তারিখে প্রধান শিক্ষকের কর্মসুচি প্রত্যাহার এবং তার পর ২ দিনের মাথায় এসে সহকারি শিক্ষকদের কর্মসুচি প্রত্যাহার করে নেওয়াটা যেন একই সুতোয় গাঁথা ।
প্রথমআলো পত্রিকাটি, নাসরিন সুলতানার বরাত দিয়ে লিখলেও ফেডারেশনের আর এক নেতা ও বাংলাদেশ সহকারি শিক্ষক সমাজের সভাপতি শাহিনুর আল-আমিন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখছেন এভাবে--
“আজ ৭ অক্টোবর, ২০১৫ প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক ফেডারেশনের নেতৃবৃন্দ প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মহোদয় জনাব মোঃ আলমগীর স্যারের সংগে সহকারী শিক্ষকদের দাবির বিষয় নিয়ে আলোচনা করি। এবং সহকারী শিক্ষকদের বিভিন্ন ভাবে হয়রানির বিষয় নিয়েও কথা বলি। মহাপরিচালক মহোদয় আমাদের সকল কথা ধৈর্য্য সহকারে শ্রবণ করেন এবং সকল দাবি যৌক্তিক ভাবে আলোচনাকরা হয়। মহাপরিচালক মহোদয় প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকদের মধ্যেকার বেতনের ব্যবধান কমানোর জন্য প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী মহোদয়ের মাধ্যমে বেতন বৈষম্য নিরসন কমিটির নিকট আবেদন করার পরামর্শ দেন। তিনি আমাদের বলেন," আমি মন্ত্রী মহোদয়ের সংগে আপনাদের কালই সাক্ষাৎ করিয়ে দিচ্ছি।" আমরা অধিদপ্তরে থাকাকালীন সময়েই স্যার মাননীয় মন্ত্রী মহোদয়ের নিকট ফোনে কথা বলেন। মাননীয় মন্ত্রী মহোদয় আগামীকাল সকাল ৯.০০ টায় যেতে বলেছেন বলে মহাপরিচালক মহোদয় স্যার আমাদের অবগত করেন।
পরিশেষে মহাপরিচালক মহোদয় আমাদের কর্মসুচি প্রত্যাহার করার জন্য আবার অনুরোধ করেন। স্যারের অনুরোধে আমরা আমাদের কর্মবিরতী কর্মসুচি সাময়িক ভাবে স্থগিত করি। আমরা কখনই ক্লাস বর্জণ কর্মসুচি দিতে চাইনা। কিন্তু আমাদের সহকারী শিক্ষকরা যুগ যুগ ধরে অবহেলিত, বঞ্চিত। তাদের কথা কেউ শোনেনা। তাদের কথা শোনানোর জন্য এ কর্মসুচি।
আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন জনাব মোঃ জাহিদুর রহমান বিশ্বাস, জনাব আঃ হক, নাসরিন সুলতানা, আমি শাহিনুর আল্ আমীনসহ ফেডারেশনের অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।”
এদিকে সহকারি শিক্ষক নেতাদের একাংশের এই সিদ্ধান্তে সহকারি শিক্ষকদের অপর এক অংশের তথা সহকারি শিক্ষক ঐক্যজোট নেতা
Mohammad Shamsuddin ধিক্কার জানিয়েছেন। তাঁর ফেসবুক টাইম লাইনে তাৎক্ষণিক যে প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায় নিচে হুবহু উদ্বৃত করা হল ----
“ভীরু, কাপুরুষ আর দূর্বল চিত্তের জন্য আন্দোলন নয়। এরা চলার পথের সঙ্গীকে পথ চলতে বলে আবার সেই পথেই কাঁটা বিছিয়ে রাখে। এরা মানুষকে স্বপ্ন দেখিয়ে আবার সেই স্বপ্নকে গলা টিপে হত্যা করে। এরা অন্যের যাত্রা ভঙ্গ করতে মুখিয়ে থাকে। সহকারী ভাইয়েরা এদের থেকে দূরে থাকুন। অধিকার আদায়ে সচেষ্ট থাকুন। ঐক্যজোট নির্ধারিত ধারাবাহিক কর্মসূচি পালন করুন।” ---
Mohammad Shamsuddin
“সেই নাসরিন সুলতানা
সেই হটকারিতা;
সহকারি শিক্ষকদের বেতন বৈষম্যের প্রতিবাদের আন্দোলন স্থগিত করেছেন ফেডারেশনের নেতা নাসরিন সুলতানা। গতবারের আন্দোলন তুঙ্গে উঠার পরই বিদেশ ভ্রমণের টোপ পেয়ে সব ভার মন্ত্রীর উপর ছেড়ে নেত্রী চলে যান বিদেশে।
এবার আন্দোলনের ডাক দিয়ে নতুন কোনো সুবিধা পেয়ে আন্দোলন স্থগিত করে মন্ত্রীর কাছে দায়িত্ব দিয়েছেন।” --
সাঈদ বিন আমান
এই হচ্ছে আমাদের বাংলাদেশের প্রাথমিক শিক্ষকদের হাল-চাল। এদিকে কর্মবিরতি স্থগিত করলেও সহকারি শিক্ষক ফেডারেশনের নেতারা তাঁদের ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখছেন-
“কর্মবিরতি স্থগিত
=============
আজ প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক ফেডারেশনের সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতৃবৃন্দ এক বৈঠকের মাধ্যমে চলমান কর্মবিরতি কর্মসূচী ১৪ অক্টোবর পর্যন্ত স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে। তবে ১৫ অক্টোবর, বৃহস্পতিবার প্রেস ক্লাবের সামনে পূর্বনির্ধারিত প্রতীকী অনশন যথারীতি পালিত হবে।”
আসলে কর্মবিরতি স্থগিত করে ১৫ ই অক্টোবরের প্রতীকী অনশন চালিয়ে যাওয়া কোন অর্থ বহন করে তার ব্যাখ্যাটা না হয় আমরা আগামী কাল কোন একসময়ে ফেডারেশনের নেতার মুখ থেকে শুনব। সেই পর্যন্ত ভাল থাকবেন সবাই।
নীচে কমেন্টস বক্সে সহকারি শিক্ষকদের আন্দোলন নিয়ে আপনার মন্তব্য লিখুন।
No comments:
Post a Comment