
দেশের প্রায় ৩১৬ টি উপজেলায় কোন সরকারি মা্ধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নেই এবং ৩২৯ টি উপজেলায় কোন সরকারি কলেজে নেই, যা সরকারের গোচরীভুত হয়েছে। তাই সরকার অতি শিঘ্রই দেশের উক্ত্ উপজেলাগুলোতে একটি করে মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও একটি করে কলেজকে সরকারী করণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যাচায় বাছাই করে প্রায় ৭০০ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে নেওয়া হবে এই আওতায়। এ উদ্দেশ্যে সরেজমিন পরিদর্শন করে স্কুল কলেজের সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহের কাজ চলছে। ইতোমধ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এ এস মাহমুদকে আহবায়ক করে ৭ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটিও গঠন করা হয়েছে। শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ছাড়াও শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) প্রতিনিধি রাখা হয়েছে কমিটিতে। প্রতিষ্ঠান সরকারিকরণের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় নীতিমালা প্রণয়ন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিদর্শনের মাধ্যমে শিক্ষার্থী সংখ্যা, শিক্ষক সংখ্যা, জমির পরিমাণ, ফলাফলসহ বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরে একটি প্রস্তাবনা উপস্থাপন করবে কমিটি। এছাড়া প্রতিষ্ঠান সরকারি করার জন্য শিক্ষকদের বেতনভাতা খাতে কত ব্যয় হবে এমনও তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে।
তথ্য অনুযায়ী, দেশে মোট উপজেলার সংখ্যা ৪৯০টি। এর মধ্যে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় আছে এমন উপজেলার সংখ্যা ১৭৪টি। বাকি ৩১৬ উপজেলায় কোন সরকারি স্কুল নেই। অন্যদিকে শুধু ঢাকা মহানগরীতেই সরকারি মাধ্যমিক স্কুলের সংখ্যা ৩৫টি। মহানগর বাদে দেশে উচ্চ বিদ্যালয়ের সংখ্যা ২৭৭টি। পঞ্চগড়ের ৫টি উপজেলার মধ্যে পঞ্চগড় সদরে ১টি, দেবীগঞ্জে ২টি সরকারি স্কুল আছে। কিন্তু বোদা, অটোয়ারি ও তেঁতুলিয়া উপজেলায় কোন সরকারি স্কুল নেই। এ উপজেলাগুলোতে সরকারি স্কুল করা হবে।
দেশের সরকারি কলেজ আছে এমন উপজেলা ১৬১টি। বাকি ৩২৯ উপজেলায় কোন সরকারি কলেজ নেই। ঢাকা মহানগরে ১৫টি, চট্টগ্রামে ৫টি, খুলনায় ৭টি এবং রাজশাহী মহানগরে ৪টিসহ এই চার মহানগরেই সরকারি কলেজ ৩১টি।
আবার বরগুনা জেলায় ৬টি উপজেলার মধ্যে শুধু বরগুনা সদর উপজেলায় দুটি সরকারি কলেজ রয়েছে। এছাড়া আমতলী, তালতলী, পাথরঘাটা, বামনা ও বেতাগী উপজেলায় কোন সরকারি কলেজ নেই। এই ৫টি উপজেলায় ৫টি এমপিওভুক্ত কলেজ সরকারি করা হবে। এ এলাকার কলেজগুলোর তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। এভাবে প্রতিটি উপজেলার তথ্য সংগ্রহের কাজ চলছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, গত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে সরকারি স্কুল নেই এমন উপজেলায় একটি মাধ্যমিক পর্যায়ের এমপিওভুক্ত স্কুলকে মডেল স্কুল করার প্রকল্প গ্রহণ করে। এসব প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামো উন্নয়ন ও শিক্ষা উপকরণ সরবরাহের সিদ্ধান্ত হয়। মাধ্যমিক পর্যায়ে সরকারি করার ক্ষেত্রে এসব প্রতিষ্ঠানকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়া হতে পারে বলে একটি সূত্র জানিয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যে সব উপজেলায় সরকারি স্কুল ও কলেজ নেই সেসব স্থানে একটি করে স্কুল ও কলেজ করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। সে আলোকেই কাজ চলছে।
কমিটির আহবায়ক অতিরিক্ত সচিব এ এস মাহমুদ বলেন, কমিটির প্রধান হিসাবে কাজ এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি।
কমিটির সদস্য মাউশির উপ-পরিচালক মো. বশির উল্লাহ বলেন, স্কুল কলেজ সরকারি করার লক্ষ্যে একটি নীতিমালা প্রণয়ন করা হবে। এই নীতিমালার আলোকেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যাচাই-বাছাই শেষে প্রস্তাবনা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। তিনি জানান, কমিটি ইতোমধ্যে দুটি সভা করেছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করার লক্ষ্যে এগিয়ে যাওয়া হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সরকারি হওয়ার পর শিক্ষকরা শিক্ষা ক্যাডারে অন্তর্ভুক্ত হবেন। এ কারণে এসব শিক্ষকদের শিক্ষাগত যোগ্যতা ভালোভাবে যাচাই করা হবে।
অন্যদিকে, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে প্রায় দেড়শ’ কলেজের তালিকা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে যাচাই-বাছাই শেষে সরকারিকরণের প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৯০টি কলেজ পরিদর্শন করেছে মাউশি।
এসকল খুশির খবরের মাঝে একটু হতাশার খবর হল সরকারের উদ্যোগকে কেন্দ্র করে একদল স্বার্থান্বেষী অর্থের খেলায় মেতে উঠেছে। সরকারীকরনের এ ঘোষণাকে কেন্দ্র করে একশ্রেনীর লোকের মধ্যে অর্থ লেনদেনের অভিযোগ উঠেছে।সরকারি করার কাজে জড়িত শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও শিক্ষা অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কিছু দিতে হবে-এমন কথা বলে টাকা সংগ্রহ করছেন বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানের প্রধান। এছাড়া সরকারিকরণের জন্য মন্ত্রণালয়ে নিয়মিত যাতায়াত করতে হবে, এর জন্য খরচ লাগবে- এসব বলেও শিক্ষকদের কাছে টাকা দাবি করা হচ্ছে। সরকারিকরণের তালিকায় প্রতিষ্ঠানের নাম রাখার জন্য তদবির করা হচ্ছে। সংসদ সদস্যরাও প্রতিষ্ঠান সরকারি করার লক্ষ্যে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নাম উল্লেখ করে ডিও লেটার পাঠাচ্ছেন। এটা আমাদের বাঙ্গালীদের এক চিরাচরিত অভ্যাস। তবে দেরীতে হলেও সরকারের এ উদ্যোগ সাধুবাদ পাবার যোগ্য। সরকারে এহেন উদ্যোগ সময়োপযোগী।
তথ্য সূত্র: দৈনিক ইত্তেফাক, ৩০ আগষ্ট, ২০১৫
No comments:
Post a Comment