আজ যে পশ্চিমা দুনিয়া বিজ্ঞানের জয়গান করে তার মুলে কি ছিল? নাস্তিকতা বিজ্ঞানের উপর ভরে সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্বের প্রতি আঙ্গুলি তুলছে, সেই বিজ্ঞান কার দান কোথা থেকে এল? তা জানতে ধারা-বাহিকভাবে লেখা ৪ টি পর্বে The Origin Of Science -(বিজ্ঞানের উৎপত্তি) পড়ুন। লেখাটি ইনফোটেকলাইফের নিজস্ব নয়। এটি সর্ব প্রথম প্রকাশিত হয় http://askislambd.weebly.com
বিজ্ঞানের প্রাথমিক বিষয়গুলোর উৎস কি ? সবকিছুরই একটা উৎস আছে । বিজ্ঞানেরও আছে। আপনি যদি বিবর্তনবাদীদের মত ভাবেন বিজ্ঞান শুধুমাত্র মানবজাতির জানার আগ্রহ থেকে জন্ম নিয়েছে তাহলে আপনি ভুল ভাবছেন।আধুনিক বিজ্ঞানের এত উন্নতির পিছনে মূলত দুইটা কারণ আছে।একটা হল মধ্যযুগের মুসলিমদের দ্বারা বিজ্ঞান চর্চা , আরেকটা হল ইউরোপের বিজ্ঞান বিপ্লব যা কিনা শুরু হয়েছিল Giordano Brunoর মাধ্যমে এবং শেষ হয়েছিল নিউটনের Principia Mathematica দিয়ে।এরপর মানবজাতিকে বিজ্ঞান নিয়ে গবেষণা করতে আর বেশি কষ্ট করতে হয়নি। এখানে অবাক করার বিষয় হল আরবে বিজ্ঞান বিপ্লব ও ইউরোপে বিজ্ঞান বিপ্লবের পিছনে ছিলেন একজন ব্যক্তির লিখে যাওয়া কিছু পুস্তিকা।
 |
হারমেস তথা হযরত ইদ্রিস(আঃ) |
সেই ব্যক্তিকে বিশ্ব এখন চিনে Hermes Trismegistus নামে । আর তাঁর পুস্তকগুলো একত্রে 'Corpus Hermeticum' নামে পরিচিত এবং উনার একমাত্র পূণাংগ বইয়ের নাম হল Asclepius (The Perfect Word) । কিন্তু এই Hermes Trismegistus আসলে কে? 'Corpus Hermeticum' দেখলে বুঝা যায় যে Hermes একজন রিলেজিয়াস লিডার ছিলেন এবং Hermes এর শিষ্যরা যে তাঁর লেখাগুলোও বিকৃত করেছিল তাও বুঝা যায়। Hermes Trimegistus অর্থ হল Thrice-Great Hermes । Thrice-Great হল Hermes এর উপাধি।
আর এই উপাধিপ্রাপ্ত ব্যক্তি আর কেউ নন তিনি হলেন ইদরীস (আঃ ) । ইসলামিক স্কলাররা ইদরীস (আঃ) এর সম্পর্কে এই বর্ণনাই দিয়েছেন। আর বাইবেলে তাঁকে Enoch নাম দেয়া হয়েছ | আরবদের নজরে এই বিষয়টা প্রথম ধরা পড়ে Sabian নাম এক ধর্মীয় গ্রুপের কারণে। Sabian দের রাজ্য যখন খলিফা আল-মামুনের হাতে পড়ে তখন খলিফা Sabian দের বলে তোমরা ইসলাম ধর্ম গ্রহণ কর না হলে তোমরা নিজেদের আহলে কিতাব বলে প্রমাণ কর যাতে তোমরা জিযিয়া দেয়ার যোগ্য হও আর এই দুটোর কোনটাই না করতে পারলে তোমাদের বিরুদ্ধে আমরা জিহাদ ঘোষণা করব। সৌভাগ্যক্রমে Sabian রা নিজেদের আহলে কিতাব হিসেবে প্রমাণ করতে পারে এবং তারা দাবি করে যে Hermes হলেন তাদের নবী । কুর'আনে তিন জায়গায় (২:৬২ , ২২:১৭ , ৫:৬৯) Sabian দের কথা বর্ণিত হয়েছে , আর পূর্ববর্তী স্কলাররা ইদরীস (আঃ)-কে Hermes হিসেবে আইডেন্টিফাই করতে পেরেছিলেন কারণ এই দুই ব্যক্তির উপাধি (Thrice-Great) একই ছিল।
বিজ্ঞানের বেসিক বিষয়গুলো প্রথম মানবজাতির সামনে তুলে ধরেছিলেন ইদরীস (আঃ) । এতে কোন সন্দেহ নেই। কেন নেই তা জানার জন্য কিছু দলীল দেখুন (২য় পর্ব পড়লে পুরোপুরি নিশ্চিত হতে পারবেন এই বিষয়ে ইনশা'আল্লাহ্)।
ইবনে কাসীর (রহিমাহুল্লাহ্ ) তাঁর আল বিদায়া ওয়ান নিহায়াতে ( ইংরেজী বই Prophets in the Quran দেখুন ) বলেছেন--" ...Many of the Scholars allege that he was the first to speak about this and they call him Thrice-Great Hermes ।"(ইফার বাংলা বইতে এই উপাধি অনুবাদ করে দেয়া হয়েছে। )
এছাড়া ইবনে কাসীর আরো বলেছিলেন---
" ইবন ইসহাক (র) বলেন , ইনিই সর্বপ্রথম কলম দ্বারা লেখার সূচনা করেন।... কেউ কেউ বলেন ,মু'আবিয়া ইবন হাকাম সুলামী-এর হাদীসে এ ইদরীস (আ) -এর প্রতিই ইংগিত করা হয়েছে যে , রসূলুল্লাহ্ (সঃ)-কে জ্যোতির্বিদ্যা (Astronomy) সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেছিলেন, একজন নবী ছিলেন যিনি এ বিদ্যার সাহায্যে রেখা টানতেন।সুতরাং যার রেখা চিহ্ন তাঁর রেখা চিহ্নের অনুরূপ হবে তাঁরটা সঠিক। বেশকিছু তাফসীরকার মনে করেন যে, ইদরীস (আ)-ই প্রথম ব্যক্তি যিনি এ বিষয়ে আলোকপাত করেছেন।" (ইফা , পৃষ্ঠা-২২৭)
এছাড়া ইমাম কুরতবী (রহিমাহুল্লাহ্ ) এর সূরা মারিয়ামের তাফসীর এবং মা'রেফুল ক্বুরআন থেকে ইদরীস (আঃ) সম্পর্কে জানা যায় যে--
"ইদরীস (আ) হলেন প্রথম মানব , যাঁকে মু'জেযা হিসাবে জ্যোর্তিবিজ্ঞান (Astronomy) এবং অংকবিজ্ঞান (Mathematics) দান করা হয়েছিল।তিনিই সর্বপ্রথম মানব ,যিনি আল্লাহর ইলহাম মতে কলমের সাহায্যে লিখন পদ্ধতি ও বস্ত্র সেলাই শিল্পের সূচনা করেন।তাঁর পূর্বে মানুষ সাধারণতঃ পোশাক হিসাবে জীবজন্তুর চামড়া ব্যবহার করত। ওজন ও পরিমাপের পদ্ধতি আবিষ্কার ও তার ব্যবহার তাঁর আমল থেকেই শুরু হয় ।তিনি অস্ত্র নির্মাণ করে ক্বাবীল গোত্রের বিরুদ্ধে জিহাদ করেন। "
(নবীদের কাহিনী বইয়ের ৭৫ পৃষ্ঠা দেখুন )
হিস্টোরিয়ানদের ধারণা Hermes এর জন্ম হয়েছিল মিশরে। নির্দিষ্ট ভাবে কোন একদেশকে Hermes এর জন্মস্থান বলাকে আমি সমর্থন করি না।আমি বিশ্বাস করি Hermes এর জন্ম হয়েছিল মেসোপটিয়ানের অন্তর্ভুক্ত কোন এক অঞ্চলে । হ্যাঁ সেটা মিশর হতে পারে কারণ মিশর মেসোপটিয়ান অঞ্চলের অন্তুর্ভুক্ত ছিল, সাথে ইরাকও ছিল ।
এই বিষয়ে অনেকেই একমত যে , ইদরীস (আঃ) -ই প্রথম লেখার পদ্ধতি প্রবর্তন করেছিলেন। আর মানুষ জানতে পেরেছে যে মেসোপটেমিয়ার সুমেরিয়ানরা প্রথম লেখার সূচনা করেছিল আর এই পদ্ধতিই সম্ভবত ইদরীস (আঃ) লেখ্য পদ্ধতির বিকৃত কিংবা অবিকৃতরূপ।
ইদরীস (আঃ) এর বৈজ্ঞানিক চিন্তা-ভাবনা পুস্তিকা আকারে ছিল আর এই পুস্তিকাগুলোর কারণেই আমরা মিশরের পিরামিড দেখতে পারছি। এই পুস্তিকাগুলোই তথা Corpus Hermeticum' বা Asclepius (The Perfect Word) বা Hermes এর Emerald Tablet এর কারণেই যে পরবর্তীতে বৈজ্ঞানিক বিপ্লব ঘটে তা পরের পর্বে আলোচনা করব ইনশা'আল্লাহ্।
বিজ্ঞানের প্রকৃত উৎস নিয়ে আলোচনা করছি কারণ এটা আমাদের জানা প্রয়োজন। নাস্তিক ও সংশয়বাদীরা (সবাই না) বিজ্ঞানকে ব্যবহার করছে স্রষ্টার অস্তিত্বকে অস্বীকার করতে , তারা মানুষকে বিভ্রান্ত করতে বিজ্ঞানকে ব্যবহার করছে অথচ বিজ্ঞানের বেসিক বিষয়গুলোর উৎসই হল Divine (আসমানী) যা মহান আল্লাহ্ আমাদের শিখিয়েছেন।
আসলে স্রষ্টার অস্তিত্বকে অস্বীকার করতে গিয়ে বিজ্ঞানকে টেনে আনা বোকামি ছাড়া আর কিছুই না।
No comments:
Post a Comment