ম্যানেজিং কমিটি-গভর্নিং বডির কাজ কী অথচ করে কী - ICT-তে জীবন গড়ি

Infotech Ad Top new

Infotech ad post page Top

ম্যানেজিং কমিটি-গভর্নিং বডির কাজ কী অথচ করে কী

ম্যানেজিং কমিটি-গভর্নিং বডির কাজ কী অথচ করে কী

Share This

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনা, আর্থিক ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা তদারকি, লেখাপড়ার মান নিশ্চিতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের ধারণা থেকে ম্যানেজিং কমিটি (স্কুলের ক্ষেত্রে) ও গভর্নিং বডি (কলেজের ক্ষেত্রে) বিধিমালা প্রণয়ন করা হয়। অথচ বেশির ভাগ কমিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে নিজেদের পকেট ভারী করার উত্স হিসাবেই দেখছে। এতে শিক্ষার মান বাড়ার পরিবর্তে ওই প্রতিষ্ঠানগুলোতে আর্থিক ও প্রশাসনিক অনিয়মের বোঝা বাড়ছে।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রশাসনিক ও আর্থিক অনিয়ম তদন্তের দায়িত্ব পালনকারী সংস্থা পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) কর্মকর্তারা বলছেন, প্রতিষ্ঠানের ৯৫ ভাগ অনিয়মই ম্যানেজিং কমিটির কারণে হয়ে থাকে। বোর্ড টাকা নিয়ে অযোগ্যদের যোগ্য বানিয়ে শিক্ষক-কর্মচারী হিসাবে নিয়োগ দেয়। বিভিন্ন কৌশলে প্রতিষ্ঠানের টাকা আত্মসাত্ করে। প্রতিষ্ঠানের যুগ্ম-পরিচালক বিপুল চন্দ্র সরকার বলেন, পদাধিকার বলে গভর্নিং বডি/ম্যানেজিং কমিটির সদস্য সচিব থাকেন অধ্যক্ষ/প্রধান শিক্ষক। এ কারণে কোনো অনিয়মের দায়ভারের জন্য অধ্যক্ষ/প্রধান শিক্ষককে দায়ী করা হয়। এ ছাড়া, গভর্নিং বডি/ম্যানেজিং কমিটি অযোগ্য কাউকে নিয়োগ দিলেও সরকারি নিয়ম অনুযায়ী যিনি অবৈধ সুবিধা নিয়েছেন তাকে দায়ী করা হয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বর্তমানে দেশে প্রায় ২৮ হাজার এমপিওভুক্ত স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা রয়েছে। আর এতে শিক্ষক-কর্মচারী রয়েছেন প্রায় পৌনে পাঁচ লাখ।
কি কাজ করে ম্যানেজিং কমিটি ও গভর্নিং বডি
গর্ভনিং বডির সদস্যরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে মূলত কয়েকটি দায়িত্ব নিয়মিত পালন করেন। প্রথমত: প্রতিষ্ঠানের সকল লেনদেনের ক্ষেত্রে প্রধান শিক্ষক বা অধ্যক্ষের সঙ্গে ব্যাংক চেকে সভাপতির স্বাক্ষর থাকতে হয়। আর এই লেনদেন ইচ্ছেমতো করেন সভাপতি। বিভিন্ন খাতে ব্যয় দেখিয়ে তছরুপ করা হয় প্রতিষ্ঠানের ফান্ড। প্রধান শিক্ষক কোনো কাজে স্বাক্ষর না দিতে চাইলে তাকে চাকরিচ্যুতও করা হয়। কিংবা হেস্তনেস্ত করা হয়। ফলে চাকরির ভয়ে প্রতিষ্ঠান প্রধানরা চুপ করে থাকেন। কখনো গভর্নিং বডির সাথে মিলেমিশে অনিয়ম করে থাকেন প্রধান শিক্ষক এবং অধ্যক্ষ।
দ্বিতীয়ত: মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তর থেকে শিক্ষকদের জন্য পাঠানো বেতন-ভাতা ছাড় করতে সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক স্বাক্ষরিত একটি বিল ব্যাংকে পাঠাতে হয়। এ ছাড়া, এতদিন সহকারী শিক্ষক ও প্রভাষক পদে নিয়োগ দিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিতেন তারা। দক্ষতার চেয়ে টাকাকেই তারা বড় করে দেখতেন। কিন্তু বর্তমানে এন্ট্রি পদে নিয়োগের ক্ষমতা সরকার নিয়ে নেওয়ায় এখনো অন্য পদগুলোতে ঠিকই বড় অঙ্কের টাকার বিনিময়ে নিয়োগ দিচ্ছেন তারা। এই কাজগুলোর বাইরে আর কোনো দায়িত্বই পালন করেন না ম্যানেজিং কমিটি এবং গভর্নিং বডির সদস্যরা। এমনকি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের লেখাপড়ার উন্নয়নে কোনো পরামর্শও দেন না তারা। ফলে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠেছে, এই কমিটি কি শুধু টাকা পয়সা ভাগবাটোয়ার জন্যই?
স্বাধীনতার পর থেকে ব্যক্তি উদ্যোগেই চলত বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ১৯৮০ সাল থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা হয়। তখন থেকে মূল বেতনের ৫০ শতাংশ দিতো সরকার। এরপর থেকে তা বাড়তে থাকে। ২০০৪ সাল থেকে শতভাগ বেতনই দিচ্ছে সরকার। আর বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনার জন্যই ১৯৭৭ সালে বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটি বিধিমালা প্রণয়ন হয়। ২০০৯ সালে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গভর্নিং বডি ও ম্যানেজিং কমিটি প্রবিধানমালা সংশোধন হয়। পরবর্তীতে আদালতের আদেশে এই বিধিমালা সংশোধন করা হয়।
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক অধ্যাপক ড. আব্দুল মান্নান বলেন, ম্যানেজিং কমিটি শিক্ষাবান্ধব হতে হবে। তবে অনেক জায়গায় এটি হচ্ছে না। তারা টাকা নয়ছয় করে। অযথা খবরদারি করে। শিক্ষকদের নানাভাবে হয়রানি করে।
বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির সভাপতি মো. নজরুল ইসলাম রনি বলেন, ম্যানেজিং কমিটি এবং গভর্নিং বডির সভাপতি ও অন্যান্যদের কারণে আমরা অতিষ্ঠ থাকি। শিক্ষার মান উন্নয়নে তাদের কোনো ইচ্ছে নেই। আর্থিক সুবিধা নেয়ার জন্যই তারা ব্যস্ত থাকে। এসব কারণে মনে হয় এমন কমিটি প্রয়োজন নেই।
ম্যানেজিং কমিটি ও গভর্নিং বডির প্রবিধানমালা অনুযায়ী তাদের দায়িত্ব : তহবিল সংগ্রহ ও ব্যবস্থাপনা এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য ডোনেশন সংগ্রহ, শিক্ষক নিয়োগ, সাময়িক বরখাস্ত ও অপসারণ, বার্ষিক বাজেট অনুমোদন ও উন্নয়ন বাজেট অনুমোদন, ছাত্র-ছাত্রীদের বিনাবেতনে অধ্যয়ন মঞ্জুরি, ছুটির তালিকা অনুমোদন, ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য পর্যাপ্ত স্থান সঙ্কুলান ও স্টাফদের বাসস্থানের ব্যবস্থা করা, জমি, ভবন, খেলার মাঠ, বই, ল্যাবরেটরি, বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি ও অন্যান্য শিক্ষা উপকরণের ব্যবস্থা করা, বিভিন্ন ধরনের আর্থিক তহবিল গঠন ও রক্ষণাবেক্ষণ, স্কুলের সম্পত্তির কাস্টোডিয়ান হিসেবে দায়িত্ব পালন, শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা প্রতি মাসের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে প্রদান নিশ্চিত করা, শিক্ষকদের নিয়ে প্রি-সেশন সম্মেলনের ব্যবস্থা করা, যাতে বিগত বছরের মূল্যায়ন ও আগামী বছরের কর্মপরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা থাকবে।
বিধিমালায় ম্যানেজিং কমিটি ও গভর্নিং বডির ১৬টি দায়িত্ব পালনে বাধ্যবাধকতা থাকলেও গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলোর মধ্যে বই, ল্যাবরেটরি, বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি ও অন্যান্য শিক্ষা উপকরণের ব্যবস্থা করে দেয় সরকার। নিয়োগ ও ভর্তি বাণিজ্য এবং প্রতিষ্ঠানের ফান্ড থেকে বেনামে টাকা খরচ করা ছাড়া খুব একটা দায়িত্ব পালন করতে দেখা যায় না। অন্য দায়িত্বগুলোর প্রতি তাদের আগ্রহ নেই।
সূত্রঃ ইত্তেফাক

No comments:

Post a Comment

Infotech Post Bottom Ad New

Pages