ভবিষ্যত শিক্ষা ব্যবস্থা - ICT-তে জীবন গড়ি

Infotech Ad Top new

Infotech ad post page Top

ভবিষ্যত শিক্ষা ব্যবস্থা

ভবিষ্যত শিক্ষা ব্যবস্থা

Share This

আমরা এমন এক শিক্ষাব্যবস্থার স্বপ্ন দেখি যে শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষার্থীরা সবার আগে মানবিক গুণসম্পন্ন মানুষ হবে। অনেকে ডিজিটাল শিক্ষাব্যবস্থার কথা বলে, কিন্তু আমি মনে করি সদাচার, শিষ্টাচার, নৈতিক মূল্যবোধ এবং দেশপ্রেমের শিক্ষা তার চেয়েও অধিক গুরুত্বপূর্ণ। তবে হ্যাঁ, তারা বিজ্ঞান এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি শিক্ষায় হবে সর্বাধুনিক। প্রত্যেক শিক্ষার্থী তার মেধা ও যোগ্যতা অনুযায়ী দক্ষ মানবসম্পদে পরিণত হবে।


প্রাথমিক স্তর থেকেই শিক্ষার্থীদের নৈতিক মূল্যবোধ সম্বলিত মানবিক শিক্ষা এবং দেশপ্রেম ও স্বজাত্যবোধের শিক্ষার ওপর অধিক গুরুত্ব দিতে হবে। কারণ শিক্ষার্থীদের যদি আমরা প্রকৃত অর্থে মানুষ করে গড়ে তুলতে না পারি, তাদের মধ্যে দেশপ্রেম ও স্বজাত্যবোধের চেতনা জাগ্রত করতে না পারি—তাহলে তাদের শিক্ষা কিন্তু দেশ ও জাতির কোনো কল্যাণে আসবে না। একই সঙ্গে যুগের সাথে তাল মিলিয়ে বিজ্ঞান এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি শিক্ষার জন্য সর্বাধুনিক পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। এসব বিষয়ে শিক্ষার জন্য প্রাকটিক্যাল এবং ল্যাবগুলো ডিজিটাল করতে হবে এবং সেগুলোতে সর্বাধুনিক যন্ত্রপাতি সরবরাহ করতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে দক্ষ এবং মেধাবী শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে। একই সঙ্গে কারিগরি শিক্ষাব্যবস্থাকে আরও আধুনিক করে গড়ে তুলে তরুণ সমাজের একটা বড় অংশকে কারিগরি শিক্ষার আওতায় এনে তাদের দক্ষ মানবসম্পদে পরিণত করতে হবে।


আধুনিক পরিবর্তনশীল বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার জন্য আমাদের শিক্ষার্থীরা যথেষ্ট প্রস্তুত বলে আমি মনে করি। কারণ আমাদের দেশে নানা প্রতিবন্ধকতা মোকাবিলা করে শিক্ষার্থীরা যখন উচ্চশিক্ষার জন্য বাইরের দেশগুলোতে যায়, তখন তারা কিন্তু অনেক ভালো ভালো দেশের শিক্ষার্থীদের থেকেও ভালো করে। এটা অবশ্যই ইতিবাচক। তাই আমাদের শিক্ষার্থীদের ওপর আস্থা রেখে বলছি, তারা উপযুক্ত পরিবেশ এবং সুযোগ-সুবিধা পেলে একদিন সত্যিই আমাদের দেশটাকে পরিবর্তন করে দিতে পারবে। ভবিষ্যত্ শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষকের ভূমিকা কেমন হবে? এক্ষেত্রে সক্রেটিসের মতো আমিও বলতে চাই—শিক্ষাক্ষেত্রে শিক্ষকের ভূমিকা হওয়া উচিত দাইমার মতো। অর্থাত্ দাইমা যেমন প্রসূতিকে সন্তান জন্মদানে সহায়তা করে, ঠিক তেমনি একজন শিক্ষক তার শিক্ষার্থীদের মনে অসংখ্য প্রশ্ন আর জিজ্ঞাসার উদ্রেক ঘটিয়ে তাদের জ্ঞানান্বেষণের স্পৃহাকে জাগিয়ে তুলবে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সামনে কেবলমাত্র তথ্য-উপাত্তই উপস্থাপন করবে না, বরং তাদের স্বপ্ন দেখাতে শেখাবে এবং সে স্বপ্নকে কীভাবে বাস্তবে রূপদান করার জন্য নিরলস পরিশ্রম করতে হয় তার পথ নির্দেশ করবে। তাছাড়া শিক্ষাদান এবং গ্রহণ যেহেতু একটি মানসিক প্রক্রিয়া—তাই এক্ষেত্রে ছাত্র-শিক্ষকের পারস্পরিক বোঝাপড়ার ওপর গুরুত্ব দিয়ে আগামীর শিক্ষাব্যবস্থা গৃহীত হওয়া উচিত বলে আমি মনে করি।


বর্তমানে প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থায় প্রথম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত অধিকাংশ বিষয়ে এক শ’ নম্বরের একটি লিখিত পরীক্ষার মধ্যদিয়ে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করা হয়ে থাকে। কিন্তু এ প্রক্রিয়াটিকে আমার কাছে তেমন একটা যথাযথ বলে মনে হয় না। কারণ বিষয়ভিত্তিক নির্দিষ্ট কতগুলো প্রশ্নের উত্তর তৈরির মধ্যদিয়ে একজন শিক্ষার্থীকে আমরা যথাযথভাবে মূল্যায়ন করতে পারি না। পড়ালেখার পাশাপাশি সদাচার, শিষ্টাচার, ক্লাসে উপস্থিত, ক্লাস পারফর্মেন্স ইত্যাদি বিষয়গুলোও শিক্ষার্থীর শিক্ষাগত অর্জন হিসেবে বিবেচিত হওয়া উচিত। এ ক্ষেত্রে ভবিষতের শিক্ষাব্যবস্থার প্রতি বিষয়ে একশ’ নম্বরের মধ্যে ৬০ নম্বর লিখিত পরীক্ষা, ১০ নম্বর ক্লাস উপস্থিতি, ১০ নম্বর শিক্ষার্থীর সদাচার, শিষ্টাচার বা ক্লাস পারফর্মেন্স হিসেবে এবং ২০ নম্বর বিভিন্ন এসাইনমেন্ট বা মিডটার্ম পরীক্ষার মধ্যে বন্টন করা যেতে পারে। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এভাবে একশ’ নম্বরের মান বণ্টন করা হয়ে থাকে। অর্থাত্ আমরা খাতা-কলমে একজন মেধাবী বা এ-গ্রেডধারী শিক্ষার্থীর পরিবর্তে এমন এক মেধাবীকে মূল্যায়ন করতে চাই যে সকল দিক থেকে প্রকৃত অর্থেই মেধাবী ও পরিশ্রমী হবে। ভবিষ্যত্ শিক্ষায় শিক্ষার্থীদের উদ্ভাবন ও গবেষণা কার্যক্রমে কীভাবে অংশগ্রহণ করানো যেতে পারে? মাধ্যমিক স্তর থেকেই শিক্ষার্থীদের মিনি ল্যাব, প্রাকটিক্যাল, এসাইনমেন্ট, লাইব্রেরি ওয়ার্ক ইত্যাদি কার্যক্রমে অভ্যস্ত করে তুলতে হবে। এসব কার্যক্রমের জন্য প্রতি বিষয়ে একশ’ নম্বরের মধ্যে অন্তত ১০ নম্বর বরাদ্দ করলে শিক্ষার্থীরা উদ্ভাবন ও গবেষণামূলক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতে উত্সাহী হবে। এছাড়া প্রতিবছর থানা বা জেলাভিত্তিক বিজ্ঞান মেলার আয়োজন করতে হবে, যেখানে সর্বোচ্চ ৫০ জন শিক্ষার্থীকে তাদের উদ্ভাবনের জন্য সার্টিফিকেট ও বৃত্তি প্রদানের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। উচ্চশিক্ষায় উদ্ভাবন ও গবেষণামূলক কার্যক্রমের জন্য সরকারি বরাদ্দের হার বাড়াতে হাবে। এবং গবেষকদের বিশেষভাবে মূল্যায়নের ব্যবস্থা করতে হবে।


লেখক : ড. ফাদার হেমন্ত পিউস রোজারিও
অধ্যক্ষ, নটর ডেম কলেজ, ঢাকা

No comments:

Post a Comment

Infotech Post Bottom Ad New

Pages