কোচিং, গাইড বই এবং প্রাইভেট নিঃসন্দেহে শিক্ষা ব্যবস্থার জন্য প্রতিবন্ধক। একজন শিক্ষক হয়ে এসবের পক্ষে কথা বলার মানে হলো- একজন ধূমপায়ী বলছে যে ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী যেহেতু তিনি নিজে ধূমপান করেন। তবে একথাও সত্যি এসবের জন্য শুধু শিক্ষকসম্প্রদায়কে একতরফা ব্লেইম করার কোনো সুযোগ নেই। যেকোনো সমস্যা সমাধান করার পুর্বে আমাদের গোড়ায় যেতে হবে। কিছু সমস্যা যেগুলো আলোচনা না করালেই নয়ঃ প্রথমত, বাংলাদেশের কোথায় কতগুলো ছাপাখানা আছে তা বোধকরি কারো অজানা নয়। এসব বন্ধ করে দিলেই তো গাইড বই এর ল্যাটা চুকে যায়। দ্বিতীয়ত, প্রাইমারী তে পাবলিক পরিক্ষার বিশাল আয়োজন করে আমাদের সন্তানাদির শৈশবকলীন আনন্দটুকু মাটি করে ঐ বয়সেই কোচিংমুখী করার জন্য দায়ী আমরা, অভিভাবক এবং সরকার। কেউ এদায় এড়িয়ে যেতে পারি না। সমাধান আমাদের খুজে নিতেই হবে। তৃতীয়ত, শিক্ষার মানের দিকে লক্ষ্য না নিয়ে আমাদের দৃষ্টি নিবন্ধ থাকে এ প্লাসের দিকে। যত বেশি এ প্লাস সরকার তত বেশি ক্রেডিট নেয়। শিক্ষা প্রতিষ্ঠনগুলো নগ্ন প্রতিযোগিতায় মেতে থাকে। অভিভাবকগনও এই বিকৃত প্রতিযোগিতায় যেনো অপ্রতিরোধ্য। এসব সমস্যা সমাধানে শিক্ষক, শিক্ষাবিদ সহ সকলকে সমাধানের পথ খুজে বের করতে হবে। প্রাইভেট বন্ধ করে দিলেই যে সব সমস্যার সমাধান হবে, এমন টা আমি মনে করি না। তার পুর্বে আমাদের শিক্ষকদের জীবনমানের দিকে দৃষ্টিপাত করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে বলে আমি মনে করি। সকল প্রাথমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ একটি ইতিবাচক প্রক্রিয়া। পর্যায়ক্রমে সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠন জাতীয়করণের আওতায় আনতে হবে। আজ দেশের ৯৮ ভাগ মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে আমরা বেসরকারি বলে আখ্যা দেই। পৃথিবীর কোথাও এমন নজির আছে বলে আমি বিস্বাস করিনা। শিক্ষকদের ন্যায্য পাওনা আদায় করার জন্য আজ রাস্তায় নামতে বাধ্য হন। এ সংস্কৃতি থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে তাদের যথাযোগ্য সম্মানজনক অবস্থান তৌরি করে দিয়ে। বারবার জেল জরিমানার ভয় দেখিয়ে উত্তরণের পথ খুজলে হিতে বিপরিত হবে। অনেকে বলে থাকে যারা প্রাইভেটের সাথে যুক্ত তারা নাকী ক্লাসে ভালো পাঠদান করান না। সংগত কারনেই একথার সাথে আমি দ্বিমত পোষণ করছি। যারা ক্লাসে ভালো পড়ান তাদের দিকেই ছাত্রছাত্রী বেশি ঝুকে থাকে। এবং অভিজ্ঞতা থেকেই বলছি তারাই ভালো শিক্ষক হিসেবে ছাত্রছাত্রীর কাছে সমাদৃত। তবে কিছু দুর্নীতিপরায়ণ শিক্ষক ছাড়া। এমনও দেখেছি পদার্থবিজ্ঞান ক্লাসে ছাত্র উপস্থিতি নেই কারন ঐ মুহুর্তে তারা রসায়ন প্রাইভেট পড়ছে। ছাত্রছাত্রীদের ফেল করিয়ে বাধ্য করে প্রাইভেট পড়ানো দুর্নীতির আরেকটা উদাহরণ। এহেন হীন সংস্কৃতি থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। তবে প্রাইভেট একেবারে বন্ধ করে দেবার বিষয়ে আমাদের আরো ভাবতে হবে।
লেখকঃ মোঃ আরিফুল ইসলাম
প্রভাষক, ইংরেজি
শায়েস্তাগঞ্জ কামিল মাদরাসা, হবিগঞ্জ।
3 comments:
এই স্যারের স্টুডেন্ট আমি
https://www.shikkabangla.com/
শিখুন মুক্ত মনে
১০০% সত্য।
Post a Comment