
জেলা সদর থেকে প্রায় ৬৬ কিলোমিটার দূরে এক পাহাড়ের কোলে ছোট্ট গ্রাম এই আইয়া কোন্ডা। মালাদাসরী সম্প্রদায়ের শ দেড়েক পরিবারের বাস এখানে।

বাড়ির মহিলার আর শিশুরা প্রতিদিন কাজে কর্মে যান এই কবরগুলো পেরিয়েই। প্রতিদিন ওই কবরে পুজো আর প্রসাদ দেন পরিবারের জীবিত সদস্যরা।
এমনকি বাড়িতে যা রান্না হয়, সেটাও কেউ ছোঁয় না যতক্ষণ না সেই খাবার কবরে প্রসাদ হিসাবে দেয়া হচ্ছে। বাড়িতে যা রান্না হয়, সেটাও কবরে না দিয়ে মুখে তোলেন না কেউ।
কীভাবে শুরু হল বাড়ির সামনে কবর দেয়ার এই রীতি?
গ্রামের পঞ্চায়েত প্রধান শ্রীনিবাসুলু বলছিলেন, আধ্যাত্মিক গুরু নাল্লা রেড্ডি আর তার শিষ্য মালা দাসারী চিন্তলা মুনিস্বামী এই গ্রামের উন্নয়নের জন্য নিজেদের উজার করে দিয়েছেন। কঠিন পরিশ্রম করেছেন তারা গোটা গ্রামের জন্য। অর্থও ব্যয় করেছেন। তাদের কাজকে শ্রদ্ধা জানাতেই গ্রামে তাদের একটা মন্দির রয়েছে, পুজো হয় নিয়মিত। আর ওই গুরুদের সম্মান জানানোর মতোই নিজের পরিবারের মৃত সদস্যদেরও সম্মান জানাতে বাড়ির সামনেই তাদের কবর দেয়ার রীতি চালু আছে।

শুধু যে পুজো দেয়া হয় বা প্রসাদ দেয়া হয় কবরগুলোতে তা নয়। বাড়িতে যদি কেউ পাখা, টিভির মতো যন্ত্র কেনে, সেগুলোও ব্যবহার করার আগে কবরের সামনে রাখা হয়।
শ্রীনিবাসুলু জানিয়েছেন যে গ্রামের মানুষদের মনে যে অন্ধ বিশ্বাস তৈরি হয়েছে, সেটা কাটিয়ে ওঠা কঠিন। তাই শিশু-কিশোরদের মধ্যে শিক্ষার বিস্তার ঘটানোর চেষ্টা করছেন তারা, যাতে এরা বড় হয়ে অন্ধবিশ্বাস ছেড়ে বেরিয়ে আসতে পারে।
শিশুদের পড়াশোনা আর দেখভালের জন্য একটা অঙ্গনওয়াড়ী কেন্দ্র খোলা প্রয়োজন। যার জন্য পাহাড়ের কোলে একটা ছোট জমির জন্য সরকারের কাছে অনুরোধ করেছেন শ্রীনিবাসুলুরা।
গ্রামে রয়েছে আরো নানা অন্ধবিশ্বাস।
শুধু যে পরিবারের মৃত সদস্যদের বাড়ির সামনে কবর দেয়ার মতো অন্ধ বিশ্বাস রয়েছে, তা নয়। বাসিন্দারা গ্রামের বাইরে কারো সঙ্গে বৈবাহিক সম্পর্ক তৈরি করেন না, এমন কি অন্য কারো খাটে শোয় না কেউ।
স্থানীয় মণ্ডল পরিষদ সদস্য খোয়াজা নবাব মনে করেন অন্ধ বিশ্বাস কাটিয়ে ওঠার একটা উপায় হল সরকার গ্রামবাসীদের কবর দেয়ার জন্য একটা জমি যদি দিয়ে দেয়।

কুরনুল থেকে নির্বাচিত এমপি বুট্টা রেণুকা অবশ্য জানতেনই না যে তারই নির্বাচনী এলাকায় এরকম কোনো গ্রাম রয়েছে। বিবিসি-র কাছ থেকেই বিষয়টা প্রথম জানলেন। আর এরপরেই জেলা শাসকের কাছ থেকে আইয়া কোন্ডা নিয়ে একটা রিপোর্ট চেয়ে পাঠিয়েছেন তিনি।
No comments:
Post a Comment