
কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়াই শেষ হলো প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আলমগীরের সঙ্গে আন্দোলনরত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বৈঠক। গত মঙ্গলবার(২২.০৯.২০১৫) বিকেলে মহাপরিচালকের কার্যালয়ে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে শিক্ষকদের কয়েকটি সংগঠনের নেতারা অংশ নেন।
বৈঠকে অংশ নেওয়া একজন শিক্ষক নেতা প্রথম আলোকে বলেন, মূলত মহাপরিচালকের কাছে তাঁরা নিজেদের দাবিগুলো আনুষ্ঠানিকভাবে তুলে ধরেছেন। মহাপরিচালক বলেছেন, দাবিগুলো তিনি আগামীকাল বুধবার প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব মেসবাহ উল আলমের কাছে তুলে ধরবেন এবং এ নিয়ে করণীয় নিয়ে আলোচনা করবেন। পরে এ বিষয়ে তাঁদের জানানো হবে।
বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি আবুল বাসার প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা আন্দোলনের পাশাপাশি দাবি পূরণে আলোচনা চালিয়ে যাবেন। প্রধান শিক্ষকদের বেতন-সংক্রান্ত জটিলতা নিরসনসহ কয়েকটি দাবিতে এই সংগঠনটি আন্দোলন করছেন।
প্রধান শিক্ষকদের দ্বিতীয় শ্রেণির গেজেটেড কর্মকর্তার পদমর্যাদা ও জাতীয় বেতন স্কেলের দশম গ্রেডে অন্তর্ভুক্ত করাসহ পাঁচ দফা দাবিতে আন্দোলন করছে বাংলাদেশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক সমিতি। এই সংগঠনের নেতারাও মহাপরিচালকের কাছে নিজেদের দাবি তুলে ধরেন।
এ ছাড়া চারটি শিক্ষক সংগঠনের জোট প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক ফেডারেশনের কয়েকজন নেতাও পৃথকভাবে দাবি জানিয়েছেন। অষ্টম বেতন স্কেলে প্রাথমিক সহকারী শিক্ষকদের ১১ তম গ্রেডে অন্তর্ভুক্ত করা এবং টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড বহাল রাখার দাবিতে আন্দোলন করছেন তাঁরা। এই সংগঠনের ডাকে গত মঙ্গলবার (২২.০৯.২০১৫ ইং) পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালন করেছেন শিক্ষকেরা।
এত গেল সেদিনের বৈঠকের সারাংশ। আসুন জানি সেদিন সেই বৈঠকের আগে ও পরে কি ঘটে ছিল-
বলাবাহুল্য যে, প্রাথমিক শিক্ষকদের একটি বিশাল অংশ সহকারী শিক্ষক তাদের পাশ কাটিয়ে যাওয়ার এখানে কোন সুয়োগ আছে বলে আমি মনে করিনা। অথচ বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির ব্যানারে আমাদের সম্মানিত প্রধান শিক্ষরা যে দাবী করছেন তাতে সহকারী শিক্ষকদের কোন দাবী তো তারা তুলেনই নি বরং সেখানে তারা সহকারী শিক্ষক ও প্রধান শিক্ষক দের মাঝে আরও ব্যবধান বেশি করতে চাইছেন সহকারী প্রধান শিক্ষক নামে আর একটি পদ সৃষ্টি করার মা্ধ্যমে। আরও শুনুন সহকারীর শিক্ষকগণের একজন বিশিষ্ট নেতা
শাহিনুর আল-আমিনের নিজের লেখা বয়ান থেকে-
“মহাপরিচালক মহোদয়ের সংগে বৈঠক শুরুহল ৩ঃ২০ টায়। সকল সহকারী শিক্ষক সংগঠনের নেতারা সেখানে উপস্থিত। স্যার সবার দাবি শুনলেন এবং লিখিত আকারে গ্রহণ করলেন। সবার দাবি পর্যালোচনা হল। তারপর কমন দাবিগুলি একত্রিত করা হল। স্যার কথা দিলেন আগামীকাল সচিব স্যার ও মন্ত্রী মহোদয়ের সাথে বসে আমাদের দাবি দাওয়া নিয়ে আলোচনা করবেন। তিনি বল্লেন, সরকার আমাদের প্রতি খুবই আন্তরিক আছে। আমরা যেন বাচ্চাদের লেখা পড়ার ক্ষতি না করি। আমরা বল্লাম দাবিগুলি ন্যায্য ও যৌক্তিক মেনে নিলেইতো হয়। স্যার আন্দোলন করতে বারণকরেননি। শুধু লেখা পড়ার ক্ষতি না হয়। স্যার প্রশ্ন করলেন, আমরা পরীক্ষা বর্জন করব কিনা। আমি বল্লাম, দাবি না মানা হলে অবশ্যই পরীক্ষায় আমরা অংশ নিব না। আলোচনার শুরুতে একটা অনাকাংক্ষিত ঘটনা ঘটে গেল কোন একজন শিক্ষক নেতা নাম বলতে চাইনা মুজীব কোট পরে গিয়েছেন। স্যার বল্লেন, মুজীব কোটের সম্মান জানেন, এটাতো মন্ত্রী বা এমপিরা পরেন, আপনি একজন শিক্ষক হয়ে এ কোট পরা ঠিক নয়। আসলে আমি জানিনা আমরা সরকারি চাকুরী জীবীরা এ পোষাক পরতে পারি কিনা। কেও জানলে আমাকে জানাবেন।
আমি কাওকে আক্রমনের জন্য সব জানাচ্ছি কিষয়টি এমন নয়। অনেক কথা হল আমাদের দাবির পক্ষে। পাশে বসা ছিল একজন সাবেক সমিতির নেতা তিনি হেডদের কথা বলতে গেলেন। আমার আর সহ্য হচ্ছিল না। আমি বল্লাম এই আপনি কে? কেন সহকারীদের মিটিং-এ? আমার সাথে ফেডারেশনের নেতা নাসরিন সুলতানাও উচ্চস্বরে বলে উঠলেন আপনি কে? এখানে কেন? তার পর আমার পাশেই ছিলেন ঢাকা জেলার ডিপিও ম্যাডাম আমাকে থামিয়ে দিলেন। মাথাও (হেড) কোন কথা আর বল্লেন না। চুপচাপ বসে গেলেন। আমরা জানি ডিজি মহোদয়তো আর কোন ঘোষণা দিতে পারেন না। তিনি শুধু আলোচনা করে উপরে জানাতে পারেন। তাই করলেন। আমরা ভেবেছিলাম আন্দোলন থামানোর কথা বলবেন, থ্রেড করবেন। ফারুক জলিল যা করেছিল। কিন্তু না, স্যার আমাদের সবার কথা শুনে সুন্দর ভাবে তার মত ব্যক্ত করলেন। আমাদের আলোচনা শেষ হলে আমরা বাইরে অর্থাৎ রুমের বাইরে আসতেই শুনলাম বাশার তুতা কোন এক ফাঁকে স্যারের রুমে ঢুকেছে। গতকাল তার দাবি পড়লাম দেখলাম সে তার দাবিতে সহকারী প্রধান শিক্ষক পদ চেয়েছে। তার মানে বৈষম্য আরো বেশী মেজাজ খারাপ হয়ে গেল দালাল ধর বলে এগিয়ে গেলাম। দেখলাম আমার সাথে অনেক কন্ঠ এক হল। তপন দা, নাসরিন সুলতানা, রবিউল শাহিনুর আক্তার সবাই খুবই ভাল লাগল। চিৎকার বকা ঝকা শুরু হল। এক পর্যায় ডিজি স্যারের রুমের ভিতর থেকে দরজা বন্ধ হল। তারপর আমাদের ঢুকতে দেওয়া হল। আমরা বল্লাম যে, ওদের জন্যই এই বৈষম্য। কি দাবি দিয়েছে দেখব। তার দাবি পরিবর্তিত হয়েছে। কিছু বল্লাম না।
আলোচনা চলবে কর্মসুচিও বাড়বে। আপনারা প্রস্তুত থাকুন। ১৫ তারিখ (অক্টোবর) ঢাকায় আসার জন্য। চিড়ে মুড়িসহ। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। আমরা ভয় পাইনা। পাশে আছি, থাকব। ফিরিবার পথ নাহি।
পরিশেষে দেশের সকল শিক্ষকদের ধন্যবাদ জানাই সফল ভাবে কর্মসুচি পালন করার জন্য।
সকলের মঙ্গল কামনায়।
শাহিনুর আল্- আমীন
সভাপতি
বাপ্রাসশিস ১২০৪৮
০১৫৫৩৩০০৩৪৪।”
এই হল আমাদের সম্মানিত প্রধান শিক্ষকদের কীর্তিকলাপ ! আসলে একটা জিনিস আমার বুঝে আসেনা, সহকারী শিক্ষকগন এগার তম গ্রেড দাবী করলে তাতে প্রধান শিক্ষকগনের আপত্তিটা কোথায়? আমাদের এদাবী মেনে নেওয়া মানেই আপনাদের নিশ্চিত ২য় শ্রেনীর পাওয়া। আর এমনটি যদি করেন তাহলে একবার ভাবুন তো, বাংলাদেশের কোন প্রতিষ্ঠানে গিয়ে আপনারা চাকুরী করতে পারবেন? কেউ আপনাদের মানবে? আপনারাই প্রাথমিক শিক্ষার স-পরিবেশটা নষ্ট করছেন। একই ছাদের নীচে থেকে এই বৈরীতা চলেনা চলতে পারেনা । এর শেষ হওয়া উচিৎ এবং তা এখনই এই মহুর্তে। তা না হলে আমাদের সবার কপালে দুঃখ আছে।
সহকারী শিক্ষদের পক্ষে যে দাবী দাওয়া সেখানে পেশ করা হয়েছিল তা দেখতে চাইলে
এখানে ক্লিক করুন
No comments:
Post a Comment