সবােইকে ইনফোটেক লাইফ.কমের পক্ষ থেকে একরাশ শুভেচ্ছা জানিয়ে শুরু করছি। কেমন আছেন সবাই? আজকের এই পোস্টটি বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত সকল শিক্ষকের উদ্দেশ্যে। আমরা যারা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক, তারা অনেকেই জানি কোমল মতি শিক্ষার্থীদের সংগীত বিষয়ক প্রান্তিক যোগ্যতা অর্জনের জন্য জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা একাডেমী(নেপ) কর্তৃক অনুমোদিত ১২ টি সংগীত প্রাথমিক স্তরের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের শেখানোর কথা বলাে হয়েছে। এতদুদ্দেশ্যে বাংলাদেশের প্রতিটি প্রাথমিক শিক্ষক প্রশিক্ষন(পিটিআই) কেন্দ্রে এই গানগুলো চর্চা করা হয। কিন্তু আমরা কয়জন এগুলো চর্চা করি? আবার চর্চা করলেও তা সংগ্রহে না থাকায় তা আবার ভুলে যেতে বসি। তাই আমি আপনাদের জন্য আজ নিয়ে এলাম অনুমোদিত সেই বারটি গানের সংকলন। যা আপনাদের কাজে আসবেই। তো আসুন কথা না বাড়িয়ে আসুন কাজে নেমে পড়ি-
১. জাতীয় সংগীত
কথা ও সুরঃ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালবাসি।
চিরদিন তোমার আকাশ, তোমার বাতাস, আমার প্রাণে বাজায় বাঁশি ।
ও মা, ফাগুনে তোর আমের বনে ঘ্রাণে পাগল করে ,
মরি হায়, হায় রে।
ও মা, অঘ্রাণে তোর ভরা ক্ষেতে আমি কী দেখেছি মধুর হাসি ।।
কী শোভা, কী ছায়া গো, কী স্নেহ, কী মায়া গো।
কী আঁচল বিছায়েছ বটের মূলে, নদীর কূলে কূলে।
মা, তোর মুখের বাণী আমার কানে লাগে সুধার মত,
মরি হায়, হায় রে।
মা, তোর বদনখানি মলিন হলে ,ও মা, আমি নয়নজলে ভাসি।।
২. রণ সংগীত
কথা ও সুরঃ কাজী নজরুল ইসলাম
চল্ চল্ চল উর্ধ্ব গগনে বাজে মাদল
নিম্নে উতলা ধরণী তল
অরুণ প্রাতের তরুণ দল
চলরে চলরে চল্ ।।
ঊষার দুয়ারে হানি আঘাত
আমরা আনিব রাঙা প্রভাত
আমরা টুটাব তিমির রাত, বাধার বিন্ধাচল
নব নবীনের গাহিয়া গান
সজীব করিব মহাশ্মশান
আমরা দানিব নতুন প্রাণ্
বাহুতে নবীন বল্
চলরে নওজোয়ান ,শোনরে পাতিয়া কান্
মৃত্যু তোরণ দুয়ারে দুয়ারে জীবনের আহবান।
ভাঙরে ভাঙ আগল্
চলরে চলরে চল্
চলরে চলরে চল্
৩. হামদ
কথা ও সুরঃ কাজী নজরুল ইসলাম
এই সুন্দর ফুল সুন্দর ফল মিঠা নদীর পানি
খোদা তোমার মেহেরবানি
শস্য শ্যামল ফসল ভরা মাটির ডালি খানি
খোদা তোমার মেহেরবানি ।।
তুমি কতই দিলে রতন , ভাই বেরাদার পুত্র স্বজন
ক্ষুধা পেলেই অন্ন জোগাও, মানি চাইনা মানি
খোদা তোমার মেহেরবানি ।।
খোদা তোমার হুকুম তরক করি আমি প্রতি পায়
তবু আলো দিয়ে বাতাস দিয়ে বাঁচাও এ বান্দায় ।
শ্রেষ্ঠ নবী দিলে মোরে, তরিয়ে নিতে রোজহাশরে
পথ না ভুলি তাইতে দিলে ,পাক কোরানের বাণী
খোদা তোমার মেহেরবানি ।।
৪.নাত
কথা ও সুরঃ কাজী নজরুল ইসলাম
ত্রিভুবনের প্রিয় মোহাম্মদ এল রে দুনিয়ায়
আয়রে সাগর আকাশ বাতাস দেখবি যদি আয় ।।
ধূলির ধরা বেহেশ্তে আজ জয় করিল দিল রে লাজ
আজকে খুশীর ঢল নেমেছে ধূসর সাহারায় ।।
দেখ আমিনা মায়ের কোলে দোলে শিশু ইসলাম দোলে
কচি মুখে শাহাদাতের বাণী সে শোনায় ।।
আজকে যত পাপী ও তাপী সব গুনাহের পেল মাফী
দুনিয়া হতে বে-ইনসাফি জুলুম নিল বিদায় ।।
নিখিল দরুদ পড়ে লয়ে নাম সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম
জিন পরি ফেরেশ্তা সালাম জানায় নবীজির পায়।।
৫.প্রার্থণা সংগীত
কথা ও সুরঃ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
সারা জীবন দিল আলো সূর্য গ্রহ চাঁদ
তোমার আশীর্বাদ, হে প্রভু, তোমার আশীর্বাদ।।
মেঘের কলস ভ‘রে ভ‘রে প্রসাদবারি পড়ে ঝরে,
সকল দেহে প্রভাতবায়ু ঘুচায় অবসাদ
তোমার আশীর্বাদ, হে প্রভু, তোমার আশীর্বাদ।
তৃণ যে এই ধুলার ‘পরে পাতে আঁচলখানি,
এই ! যে আকাশ চিরনীরব অমৃতময় বাণী
ফুল যে আসে দিনে দিনে বিনা রেখার পথটি চিনে,
এই যে-ভুবন দিকে দিকে পূরায় কত সাধ-
তোমার আশীর্বাদ, হে প্রভু, তোমার আশীর্বাদ।
৬.সা-রে-গা-মা
সুর সাগরের সাতটা সুরের নৌকা আছে বাঁধা
নৌকাগুলো বেয়ে যাব
সুরের সাগর পাড়ি দেব
সাতটা সুরে সকাল সাঁঝে
তাইতো গলা সাধা
সরগমের প্রথম সুর ‘সা’ --
যেমন সবার আগে চলে ‘রা-জা’
‘সা’র পরে দ্বিতীয় সুর ‘রে’
প্রথম সিঁড়ি পার হলাম রে,
‘সা’ গেল, ‘রে’ - গেল, তার পরে গা
গাও সবাই এক সুরে সা-রে-গা-।।
তাক্ধি নাধিন্ নাতিন্ তাধিন্
ধিনতা নাতিন , তাক ধিনা-
সা-রে-গা‘র পরে ‘মা’--
‘মা’র আগে তিন সুর গা রে সা
‘মা’র পরে তিন সুর পা,ধা,নি,
‘নি’র পরে নতুন করে শুরু হয় ‘র্সা’
র্সা নি ধা পা মা গা রে সা ।।
৭. একুশে ফেব্রুয়ারি
কথাঃ আবদুল গফ্ফার চৌধুরী
সুরঃ আলতাফ মাহমুদ
আমার ভায়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি
আমি কি ভুলিতে পারি ।।
ছেলে হারা শত মায়ের অশ্রুগড়া এ ফেব্রুয়ারি
আমি কি ভুলিতে পারি ।।
আমার সোনার দেশের রক্তে রাঙানো ফেব্র“য়ারি
আমি কি ভুলিতে পারি ।।
৮. তুমি ধন্য ধন্য হে
তোমারি গেহে পালিত স্নেহে , তুমি ধন্য ধন্য হে
আমার প্রাণ তোমারি দান , তুমি ধন্য ধন্য হে।।
পিতার বক্ষে রেখেছ মোরে জনম দিয়েছ জননী ক্রোড়ে,
বেঁধেছ সখার প্রণয় ডোরে , তুমি ধন্য ধন্য হে।।
তোমার বিশাল বিপুল ভূবন করেছ আমার নয়ন লোভন-
নদী গিরি বন সরসশোভন, তুমি ধন্য ধন্য হে।
হৃদয়ে-বাহির স্বদেশে-বিদেশে যুগে-যুগান্তে নিমিষে-নিমেষে,
জনমে-মরণে শোকে-আনন্দে, তুমি ধন্য ধন্য হে।।
৯. আমাদের এই পতাকা
লাখো শহীদের রক্ত মাখা
সবুজের বুকে লাল সূর্য আঁকা
আমাদের এই পতাকা
আমাদের এই পতাকা।।
আমাদের স্বাধীনতা ঘোষণা করে
গৌরবে সৌরভে আকাশে ওড়ে
শান্তি কপোত যেন মেলেছে পাখা
আমাদের এই পতাকা
সবুজের বুকে আছে সজীবতা প্রাণ
লালে ত্যাগ শৌর্য ও বীর্যেরো গান
শান্তি সুখের এ যে অঙ্গরাখা
আমাদের এই পতাকা।।
১০. ধন ধান্য পুস্প ভরা
কথা ও সুরঃ দ্বিজেন্দ্রলাল রায়
ধন ধান্য পুষ্প ভরা আমাদের এই বসুন্ধরা
তাহার মাঝে আছে দেশ এক সকল দেশের সেরা
ওসে, স্বপ্ন দিয়ে তৈরি সে দেশ স্মৃতি দিয়ে ঘেরা
এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি
ওসে, সকল দেশের রাণী সে যে আমার জন্মভূমি
সে যে আমার জন্মভূমি ॥
চন্দ্র সূর্য গ্রহ তারা, কোথায় উজল এমন ধারা
কোথায় এমন খেলে তড়িত এমন কালো মেঘে
তার পাখির ডাকে ঘুমিয়ে উঠি , পাখির ডাকে জেগে
এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি
ওসে, সকল দেশের রাণী সে যে আমার জন্মভূমি
সে যে আমার জন্মভূমি ॥
পুষ্পে পুষ্পে ভরা শাখী, কুঞ্জে কুঞ্জে গাহে পাখি
গুঞ্জরীয়া আসে অলি পুঞ্জে পুঞ্জে ধেয়ে
তারা, ফুলের উপর ঘুমিয়ে পড়ে ফুলের মধু খেয়ে
এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি
ওসে, সকল দেশের রাণী সে যে আমার জন্মভূমি
সে যে আমার জন্মভূমি ॥
ভায়ে মায়ে এতো স্নেহ, কোথায় গেলে পাবে কেহ
ওমা তোমার চরণ দুটি বক্ষে আমার ধরি
আমার এই দেশেতে জন্ম, যেন এই দেশেতে মরি
এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি
ওসে, সকল দেশের রাণী সে যে আমার জন্মভূমি
সে যে আমার জন্মভূমি ॥
১১. ছড়া গান
কথা ও সুরঃ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
মেঘের কোলে রোদ হেসেছে বাদল গেছে টুটি
আহা, হাহা, হা ॥
আজ আমাদের ছুটি ও ভাই, আজ আমাদের ছুটি
আহা, হাহা, হা ॥
কী করি আজ ভেবে না পাই,
পথ হারিয়ে কোন্ বনে যাই
কোন্ মাঠে যে ছুটে বেড়াই সকল ছেলে জুটি
আহা, হাহা, হা ॥
কেয়া পাতার নৌকা গড়ে সাজিয়ে দেব ফুলে
তাল দিঘিতে ভাসিয়ে দেব , চলবে দুলে দুলে
রাখাল ছেলের সঙ্গে ধেনু
চরাব আজ বাজিয়ে বেণু,
মাখব গায়ে ফুলের রেণু চাঁপাবনে লুটি
আহা, হাহা, হা ॥
লোক সংগীত
কথা ও সুরঃ আব্দুল লতিফ
বেলা দ্বিপ্রহর ধূ ধূ বালু চর
ধুপেতে কলিজা ফাটে , পিয়াসে কাতর
আল্লা ম্যাঘ দে , আল্লা ম্যাঘ দে পানি দে
ছায়া দেরে তুই, আল্লা ম্যাঘ দে।।
আসমান হইল টুডা টুডা জমিন হইল ফাডা
ম্যাঘ রাজা ঘুমাইয়া রইছে
ম্যাঘ দিবো তোর ক্যাডা।।
হালের গরু বাইন্ধা গিরস্ত মরে কাইন্দা
ঘরের রমণী কান্দে
ডাইল খিচুড়ি রাইন্দা ।।
ফাইট্যা ফাইট্যা রইছে যত খালা বিলা নদী
পানির লাইগ্যা কাইন্দ্যা মরে পঙ্খী জলদী ।।
কপোত কপোতি কানদে খোপেতে বসিয়া
শুকনা ফুলের কলি পড়ে ঝরিয়া ঝরিয়া ।।
আম পাতা লড়ে চড়ে কাডল পাতা ঝরে
পানি পানি কইরা ঝিলে পানি কাউড়ী মরে।।
4 comments:
দারুন কাজ করেছেন স্যার। তবে প্রত্যেটি গানের অডিও লিংক দিলে নি:সন্দেহে সবাই উপকৃত হত। আশা করি পরবর্তিতে অডিও লিংক সহ এই বিষয়ে আর একটি টিউন করবেন। আমার নেটের গতি ভাল থাকলে আমিই চেষ্টা করতাম। সর্বপরি অসংখ্য ধন্যবাদ।
অসংখ্য ধনবাদ ভাই রিয়াজ। আপনার মন্তব্য লেখার জন্য চাতক পাখির মত বসে থাকি। পরবতীতে আমি চেষ্টা করব গানগুলোর অডিও লিংক দিতে।
রিয়াজ স্যার ঠিক বলেছেন, অডিও লিংক দিলে খব ভাল হত।
এ গানগুলো বাতিল হয়ে গেছে। অামরা নতুন কারিকুলাম অনুযায়ি ১ম ও ২য় শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়, প্রাথমিক বিজ্ঞান, ধর্মসহ সকল শ্রেণির চারুও কারুকলা, শারিরীক শিক্ষা ও সঙ্গীত নিয়ে সমন্বিত বই "অামার অাবশ্যিক পাঠ" প্রকাশ করেছি। বইগুলো সংগ্রহ করতে পারেন।
Post a Comment